ভর্তির লটারির ফলাফলে হযবরল, বগুড়ায় একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক জায়গায়

সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তির লটারির ফলাফলে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক জায়গায় এসেছে। মঙ্গলবার বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রকাশিত ফলাফল দেখছে এক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া শহরের সরকারি দুটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তির লটারির ফলাফলে হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে। সোমবার প্রকাশিত লটারির ফলাফলে দুই বিদ্যালয়ে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর নাম একাধিক স্থানে থাকার প্রমাণ মিলেছে। জালিয়াতি করে একই নামে একাধিক জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে ভর্তির আবেদন করায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

যাচাই-বাছাই না করে লটারির ফল প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকেরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে জানতে বগুড়া জিলা স্কুল ও বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বগুড়া জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আসনসংখ্যা ৪১১। ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন জমা পড়ে ২০ হাজার ২৭৭টি। প্রতি আসনে ভর্তি-ইচ্ছুক গড়ে প্রায় ৫০ জন। এর মধ্যে জিলা স্কুলে ২০৫টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়ে ১১ হাজার ৪৯৮টি। অন্যদিকে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ২০৬ আসনে ভর্তির আবেদন পড়ে ৮ হাজার ৭৭৯টি। ৬ ডিসেম্বর ছিল আবেদনের শেষ দিন। ১২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে সারা দেশের সরকারি সব স্কুলে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে মাউশি। লটারির ফলাফলে দুই বিদ্যালয়ে ২০ শিক্ষার্থীর নাম একাধিক স্থানে থাকার প্রমাণ মিলেছে।

বগুড়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামপদ মুস্তফী প্রথম আলোকে বলেন, তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য লটারির ফলাফলে ১১ জন শিক্ষার্থীর নাম একাধিক স্থানে পাওয়া গেছে। তাদের নাম, পিতা-মাতার নাম অভিন্ন থাকলেও জন্মনিবন্ধন নম্বর আলাদা।এসব শিক্ষার্থীর বিষয়ে করণীয় জানতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের কাছে সিদ্ধান্ত চাওয়া হলে তিনি এ বিষয়ে মাউশিতে চিঠি দেওয়ার পরামর্শ দেন। এখন এ বিষয়ে মাউশির কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বগুড়ার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন বলেন, তৃতীয় শ্রেণিতে আসন ছিল ২০৬টি। ভর্তির আবেদন পড়ে প্রায় ৯ হাজার। লটারির মাধ্যমে মাউশি থেকে ভর্তির ফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সেই ফলাফলে ৯ শিক্ষার্থীর নাম দুই-তিন জায়গায় আছে। শিক্ষার্থীর নাম, পিতা-মাতার নাম এক হলেও জন্মনিবন্ধন আলাদা। একজন শিক্ষার্থীর জন্য একাধিক জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে আবেদন করা হয়েছে।

ভর্তির আবেদনে শর্ত ছিল, প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি আবেদনে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দের ক্রমানুসারে নির্বাচন করা যাবে। দুই শিফটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ‘উভয় শিফট’ পছন্দ করলে দুটি পছন্দক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। একই পছন্দক্রমের বিদ্যালয় বা শিফট দ্বিতীয়বার পছন্দের তালিকায় রাখা যাবে না।

দুই বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ভর্তির লটারি ফলাফল ঘেঁটে দেখা যায়, সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দিবা শাখার ফলাফলে শর্মিলা আকতার নামে এক ছাত্রীর নাম তিন জায়গা আছে। লটারির ফলাফল তালিকার ১, ২ ও ৬ ক্রমিকে আছে শর্মিলার নাম ও ছবি। তিনটি ফলাফলে তার জন্মনিবন্ধন নম্বর আলাদা। তবে তিন জায়গাতেই শর্মিলার বাবা-মায়ের নাম ও মুঠোফোন নম্বর একই। একই অবস্থা দিবা শাখার ক্রমিক নম্বর ৯৭ ও ৯৮-তেও। রাইহান মেহজাবীন নামে এক শিক্ষার্থীর নাম দুই জায়গায় এসেছে। তবে এই শিক্ষার্থীর নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্মনিবন্ধন নম্বর অভিন্ন। মোট ২০ জন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে।

জিলা স্কুলের একাধিক শিক্ষক বলেন, জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি এবং আলাদা ইউজার আইডি ব্যবহার করে একজন শিক্ষার্থী একাধিকবার আবেদন করেছে। এটা জন্মনিবন্ধন আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা সফটওয়্যারের ভুল নয়, কারণ ফলাফল প্রকাশের আগে সফটওয়্যারের ভুল ধরা পড়ার কথা। যাচাই-বাছাই না করে ফল প্রকাশ করায় এমনটি হয়েছে।

দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, লটারির মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় কোচিং-নির্ভরতা কমেছে। তবে শিক্ষার মান দিন দিন তলানিতে যাচ্ছে। গত বছর লটারির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। তাদের এ বছর একই শ্রেণিতে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।