‘অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রেললাইন বেঁকে যাওয়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কনটেইনার বহনকারী মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে একটার দিকে সদর উপজেলার দারিয়াপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রেললাইন বেঁকে যাওয়ায় মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার জসিম মিয়া ও স্টেশনের রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমিনুল ইসলাম।
স্থানীয় লোকজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী কনটেইনার বহনকারী ট্রেনটি জেলা শহরের গোকর্ণ এলাকা অতিক্রম করে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে সদর উপজেলার দারিয়াপুর এলাকায় পৌঁছালে সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে ঢাকা অভিমুখী রেলপথে (আপলাইন) ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে পাশে থাকা ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট অভিমুখী রেলপথ (ডাউন লাইন) দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
রেলস্টেশনটির ভারপ্রাপ্ত মাস্টার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রেললাইন বেঁকে যাওয়ায় মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী কনটেইনার বহনকারী মালবাহী ট্রেনের সাতটি বগি দারিয়াপুর এলাকায় লাইনচ্যুত হয়। আখাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে উদ্ধারকাজ শুরু করবে। তবে আপলাইনটি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের পুলিশ ফাঁড়ির (ইনচার্জ) উপপরিদর্শক (এসআই) হাতেম আলী ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনটির ছয় থেকে সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। উদ্ধারকারী ট্রেনের জন্য আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রার পরিমাণ বেড়েই চলেছে। স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে রেললাইনে তাপমাত্রার পরিমাণ সব সময়ই বেশি থাকে। এ কারণে গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ১১ এপ্রিল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে এ রকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের বিভিন্ন অংশে গতি কমিয়ে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত রেললাইনের তাপমাত্রা মেপে লাইন সোজা আছে কি না, যাচাই করতে রেলওয়ের ছয়টি দল কাজ করছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। যত দিন তাপমাত্রা বেশি থাকবে, এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে।
তাপমাত্রার তীব্রতার কারণে রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে সব আন্তনগর ও লোকাল ট্রেনকে সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালাতে লোকোমাস্টারদের নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আর মালবাহী ট্রেনগুলোকে ৩০ কিলোমিটার গতিতে চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সব আন্তনগর ট্রেন ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করছে। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত রেলপথে লোকোমাস্টাররা এই নির্দেশনা মেনে ট্রেন পরিচালনা করছেন। রেলপথের বিভিন্ন অংশে রেললাইনের পাশে রেলওয়ের লোকজন পানির বালতি নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। যেখানে লাইন বাঁকা হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেখানে পানি কিংবা কচুরিপানা দিয়ে ঠান্ডা করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ ৩১ কিলোমিটার (যাওয়া-আসা ৬২ কিলোমিটার) এবং ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের আখাউড়া থেকে বিজয়নগরের মুকুন্দপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার (যাওয়া-আসা ২৮ কিলোমিটার) অংশ তাদের আওতায় পড়েছে। বৃহস্পতিবার ঝাঁকুনি খেয়ে বিভিন্ন ট্রেনের ২৮ বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।