বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শাহরিয়ার জিপিএ-৪.৮৩ পেয়েছেন, কাঁদলেন স্বজনেরা
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে মারা যাওয়ার আগে মাত্র পাঁচটি পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরেছিলেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন। আন্দোলনের জেরে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় ঢাকায় মায়ের কাছে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
সেখান থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৮ জুলাই বিকেলে ঢাকার মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরের কাছে গুলিবিদ্ধ হন। গুলি ডান চোখের পাশ দিয়ে ঢুকে মাথা ভেদ করে বের হয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই শাহরিয়ার মারা যান।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকার পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তা বাতিল হয়ে যায়। বাতিল পরীক্ষার ফলাফল এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে আজ মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে শাহরিয়ার জিপিএ–৪.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ছেলের ফলাফল দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ওমরা হজ করতে সৌদি আরবে অবস্থান করা মা-বাবা ও বোন।
শাহরিয়ারের গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের কুমড়াশাসন উত্তরপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের শেখ আবদুল মতিন ও মা মমতাজ বেগমের একমাত্র ছেলে সে। ছোট বোন শেখ মুনতাহিনাও (৮) মা-বাবার সঙ্গে এখন সৌদিতে আছে। ১ অক্টোবর তাঁরা সৌদিতে গেছেন, ফিরবেন ১৭ অক্টোবর।
শেখ আবদুল মতিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে ইন্টারনেটে ফলাফল দেখার পরপরই কান্নাকাটি শুরু হয়েছে। পাঁচটি পরীক্ষা দিতে পেরেছিল শাহরিয়ার। সন্তান নিয়ে মা–বাবার অনেক স্বপ্ন থাকে। কিন্তু আমার সবই শেষ। ছেলে তার ফলাফল দেখে যেতে পারেনি। এর চেয়ে কষ্টের কী হতে পারে। সারা জীবন এই কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে।’
আব্দুল মতিন আরও বলেন, অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে চাকরি করেছেন। ছেলে এগুলো দেখে বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু তা আর হলো না। ছেলে হত্যার উপযুক্ত বিচার পাবেন বলে তিনি আশা করেন।
স্বজনেরা জানান, চাকরির সুবাদে পরিবারটি ঢাকার কুড়িল কুড়াতলী বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করত। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১০ জুলাই ঢাকায় মায়ের কাছে চলে গিয়েছিলেন শাহরিয়ার। পরে মিরপুর ২ নম্বরে খালার বাসায় বেড়াতে যান। সেখানে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন। মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরের কাছে খালাতো ভাইসহ গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাঁর মৃত্যু হয়।
শাহরিয়ার ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার আইডিয়াল কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সিলেটের ব্লুবার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে তিনি এসএসসি পাস করেন।
ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলমগীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, মেধাবী ছাত্র ছিলেন শাহরিয়ার। পাঁচটি পরীক্ষা দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। প্রকাশিত ফলাফলে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ–৪.৮৩ পেয়েছেন। আন্দোলনের কারণে এবার এইচএসসির ফলাফল বিশেষ বিবেচনায় হয়েছে। তাই শাহরিয়ারের ফলাফলও এসেছে। কিন্তু ফলাফল আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া খুব কষ্টের।