মোংলা নদীতে নিষেধ অমান্য করে চলাচল, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ডুবে গেল ট্রলার
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে বাগেরহাটের উপকূলে। ঝড়ের প্রভাবে আজ রোববার সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া জেলাজুড়ে। হালকা বৃষ্টির সঙ্গে থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে সুন্দরবন উপকূলে।
এই পরিস্থিতিতে আজ সকালে মোংলা নদীতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে খেয়া পারাপারের একটি ট্রলার ডুবে গেছে। ট্রলারটিতে প্রায় ৬০ জন যাত্রী ছিলেন। তবে তাঁদের সবাই সাঁতরে নিরাপদে তীরে উঠেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোংলা পৌরঘাট থেকে আজ সকাল ৯টার দিকে ট্রলারটি ছেড়ে যায়। উত্তরপ্রান্তে মোংলা বাসস্ট্যান্ড ঘাটের কাছে গিয়ে এটি ডুবে যায়। যাত্রীদের সবাই সাঁতরে তীরে ওঠেন। তাঁরা সবাই মোংলা ইপিজেডের একটি কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
মোংলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, ট্রলারটি তীরের কাছাকাছি এসে ডুবে যায়। ট্রলারটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গতকাল রাতে ট্রলার চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তা উপেক্ষা করেই সেটি চলছিল। ট্রলারের সব যাত্রী তীরে উঠছে সক্ষম হয়েছেন।
মোংলা ও পশুর নদে ট্রলার ও ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার কিছু মানুষ এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন। নিরাপদ আশ্রয় যেতে মাইকিংসহ প্রচারণা করা হচ্ছে। দুপুরের পর থেকে প্রশাসন সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে কাজ শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাটের ৩৫৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছেন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুই লাখের বেশি বাসিন্দা আশ্রয় নিতে পারবেন। তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপকূলের ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আতঙ্ক বাড়লেও এখনো সেভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে শুরু করেনি মানুষ। বাসিন্দারা বলছেন, যেহেতু সন্ধ্যার দিকে ঝড় আঘাত আনতে পারে, তাই দুপুরের পর থেকে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন। তবে শরণখোলা ও মোংলার নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু মানুষ এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র এসেছে।
শরলখোলা সাউথখালী ইউনিয়নের বগী গ্রামের আলমগীর ফরাজী বলেন, বাঁধের বাইরের লোক আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন, যাঁদের ঘর বাড়ি একটু দুর্বল দুপুরের পর থেকে তাঁরাও আশ্রয়কেন্দ্রে যাবেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গতকাল শনিবার রাত থেকে মোংলাবন্দরে পণ্য ওঠানামাসহ সব কাজ বন্ধ রেখেছে। বন্দরে থাকা দেশি–বিদেশি ছয়টি জাহাজসহ জলযান নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘ইতিমধ্যে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়েছে। জেলায় ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। উপকূলীয় এই জেলার মোংলা, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও রামপাল উপজেলা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এসব এলাকার নদীতীরবর্তী বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনাই আমাদের প্রথম কাজ।’
মাসুদুর রহমান জানান, জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। আজ সকাল থেকে ওই সব এলাকায় মাইকিং করে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনার চেষ্টা চলছে। দুপুরের পর থেকে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসবে। জেলায় ৬৪৩ মেট্রিক টন চাল ও সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।