যাত্রীদের চাপে ভোলা থেকে বরিশালগামী স্পিডবোট ছেড়েছে, তবে চলছে না লঞ্চ

ভোলা থেকে বরিশালগামী স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভেদুরিয়া ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

সারা দিন বন্ধ থাকার পর যাত্রীদের চাপে অবশেষে ভোলা থেকে বরিশালগামী স্পিডবোট চালু হয়েছে। আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ভোলার ভেদুরিয়া ঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশে স্পিডবোট ছেড়ে গেছে। এরপর ভোলা থেকে বরিশালগামী স্পিডবোট চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ভেদুরিয়া ঘাটের একাধিক স্পিডবোটের মালিক। তবে ভোলা থেকে বরিশালগাম কোনো লঞ্চ ছাড়েনি। ঘাটে কোনো লঞ্চও দেখা যায়নি।

পূর্বঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে আজ সকাল থেকে ভোলা–বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ভোলার খেয়াঘাট, ইলিশা লঞ্চঘাট ও স্পিডবোট ঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশে কোনো লঞ্চ ও স্পিডবোট ছেড়ে যায়নি। তবে সকাল থেকে ভোলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাট থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, ৫ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করেই নৌযানগুলো বন্ধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

স্পিডবোটের একাধিক মালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা তিনটার দিকে ভেদুরিয়া ঘাট থেকে ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন ওরফে বিপ্লবকে নিয়ে একটি স্পিডবোট বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ সময় ঘাটে উপস্থিত যাত্রীরা স্পিডবোট ছাড়ার জন্য মালিক ও শ্রমিকদের চাপ দিতে থাকেন। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে যাত্রীদের চাপে মালিকেরা স্পিডবোট ছাড়তে বাধ্য হন।

ঘাটে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, লঞ্চ ভাংচুর

এর আগে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির নেতা–কর্মীদের দাবি, এ সময় তাঁদের পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন এবং তাঁদের এক নেতার লঞ্চে হামলা হয়েছে।

ভাংচুরের ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল রাতে এমভি ভোলা নামে লঞ্চটি ছেড়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আওলাদ নামের একটি লঞ্চ ভাংচুর করে। ওই লঞ্চে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বরিশালে যাওয়ার কথা ছিল।

ভোলা সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, বরিশালে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপজেলার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে জড়ো  হন। তাঁরা এমভি ভোলা নামের লঞ্চে উঠে বরিশালে আসবেন, এমনই কথা ছিল। এ সময় ভেদুরিয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ও পুলিশ একযোগে বিএনপির নেতা–কর্মীদের তাড়া করেছে। তখন বিএনপি প্রতিরোধের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের লক্ষ্য করে বোমা ও গুলি নিক্ষেপ করে বলে তিনি দাবি করেন। এ সময় বিএনপির কর্মী মো. হোসেন, হাবিবুর রহমান, মো. ইসমাইলসহ পাঁচ–ছয়জন আহত হয়েছেন। তাঁদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, তাঁরা লঞ্চ ভাংচুর করেননি। বিএনপি লঞ্চ ভেঙে তাদের নামে দোষারোপ করছে। তবে গতকাল রাতে তাঁরা বিএনপিকে প্রতিরোধ করেছে, এটা সত্যি। কারণ, বিএনপির নেতা-কর্মীদের হাতে দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।

মোসলেহ উদ্দিন ভোলা স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি। স্পিডবোট বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা কোনো স্পিডবোট বন্ধ করেননি। যাত্রী ছিল না, তাই বন্ধ ছিল। যখন যাত্রী হয়েছে, তখন আবার  চালু হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক স্পিডবোট মালিক বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্দেশে আজ সকাল থেকে ভোলার থেকে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। আর লঞ্চ ভাংচুরের ঘটনায় বরিশাল থেকেই লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভোলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোলা-বরিশাল নৌপথে স্পিডবোট ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ শুনেছি। কিন্তু কেন বন্ধ সেটা জানি না। এটা বিআইডব্লিউটিএ বলতে পারবে। তাঁদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে গতকাল রাতে ভেদুরিয়া ঘাটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি অবস্থানে আছে,এমন খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাধা দেয়নি।