সরকারি পুকুরের পানি টাকা দিয়ে কিনতে হয় কৃষককে
সরকারি পুকুরে নেই কৃষকের প্রবেশের অধিকার। টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না ফসলের জমিতে সেচের পানি। অনুমতি ছাড়া পুকুরের ত্রিসীমানায় পা ফেলারও জো নেই স্থানীয় কৃষকদের। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার চর এলাকায় পানির তীব্র সংকটের মধ্যেই বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সরকারি পুকুর ইজারা দিয়ে রেখেছে ইউনিয়ন পরিষদগুলো। ফলে পানির অভাবে ভুগতে হচ্ছে কৃষকদের।
মো. নুরউদ্দিন নামে একজন কৃষক জানান, ‘দুই শতক জমিতে সেচ দিতে ৫০ টাকা করে দেওয়া লাগে। সেই পানি পুকুর থেকে কাঁধে করে বহন করতে হয়। মেশিন চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি নেই। এতে খরচও বাড়ে, কষ্টও হয় বেশি।’
সন্দ্বীপের পূর্ব উপকূলের চরাঞ্চল জুড়ে ছয় ইউনিয়নে ছয়টি সরকারি পুকুর রয়েছে। এগুলো হলো সন্তোষপুর, বাউরিয়া, হারামিয়া, মগধরা, গাছুয়া ও হুদ্রাখালী ইউনিয়ন। বাউরিয়া ইউনিয়নের সরকারি পুকুরের অবস্থান পূর্ব প্রান্তের বেড়িবাঁধের কাছে। সেখানে পুকুর ঘেঁষে কয়েক একর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। বাউরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. রিয়াদ উদ্দিন এই পুকুর ইজারা নিয়েছেন বলে জানান কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, গবাদিপশু পালন ও চাষাবাদের সুবিধার জন্য চর এলাকায় এই পুকুরগুলো খনন করা হয়েছিল। গত ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে পুকুরগুলো সাধারণ মানুষের ব্যবহারের বদলে একক ব্যক্তির কাছে ইজারা দেওয়া শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ। সরকারের অধিগ্রহণ করা (খাস) জায়গায় নির্মিত পুকুরের কোনোটি মৌখিক আবার কোনোটি কাগজে কলমে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে স্বল্প মেয়াদে ইজারা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ।
গাছুয়া ইউনিয়নের সরকারি পুকুরের পুকুরের কাছেই কৃষক মো. আশ্রাফের (৪২) জমি। গতকাল শনিবার দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষকেরা চাষের লাই ফইরের (পুকুরের) পানি পাইতেছে না। মালিক সরকার অইলেও টাকা দিয়ে কেনা লাগতেছে।’
কৃষকেরা জানান, বর্তমানে সন্দ্বীপ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি কামরুল হাসানের কাছে দেওয়া আছে গাছুয়া ইউনিয়নের পুকুরের ইজারা।
এ বিষয়ে ইজারাদার কামরুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, চার বছর আগে তৎকালীন চেয়ারম্যানের থেকে ১ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি পুকুরটি ইজারা নেন। ইজারার কাগজপত্র ইউনিয়ন পরিষদেই আছে। গত ২৫ বছরে পুকুরটি থেকে মাটি ওঠানো হয়নি। পুকুরে পানিই থাকে না। এখান থেকে কৃষক পানি পাচ্ছে না এ অভিযোগ ঠিক নয়।
গাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম জানান, চার বছর আগে পুকুরটি ইজারা তিন বছরের জন্য ইজারার নেন কামরুল হাসান। তবে ইজারার মেয়াদ পার হলেও তিনি পুকুর এখনো দখলে রেখেছেন। ইজারার কোনো টাকাও তিনি পরিশোধ করেননি। এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র তাদের কাছে নেই।
ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আত্মগোপনে থাকায় ইজারার বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এসব পুকুরের ইজারার বিষয়ে সন্দ্বীপের সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়েও তেমন কোনো তথ্য মেলেনি।
সরকারি পুকুরের পানিতে কৃষকের অধিকার না থাকার বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিগ্যান চাকমা বলেন, পুকুরগুলোর জায়গার মালিকানা সরকারের। ইউনিয়ন পরিষদের এসব পুকুর ইজারা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এসব পুকুরের বিষয়ে তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল না। কৃষকদের জন্য পুকুরগুলো উন্মুক্ত করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।