পাংশায় পদ্মা নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ভাঙনের হুমকিতে নানা স্থাপনা
রাজবাড়ীর পাংশায় পদ্মা নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবাধে বালু তুলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এতে হুমকির মুখে পড়েছে তাঁদের বসতভিটা, ফসলি মাঠসহ অন্যান্য সম্পদ। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়ে সাময়িকভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছিল।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার হাবাসপুর বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন চরপাড়া ও বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কলাবাগান এলাকা থেকে দেদার বালু তুলে বিক্রি করছেন কয়েকজন ব্যক্তি। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর দুই সপ্তাহ ধরে চরপাড়া বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু বেড়িবাঁধ ঘেঁষে চাতালে রেখে বিক্রি করছেন তাঁরা। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধার মুখে অবৈধ এ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছিল। তবে আবার এক সপ্তাহ ধরে সেখানে পুরোদমে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে।
বালু উত্তোলন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া হয়। তবু থেমে নেই এসব ব্যক্তির অবৈধ কার্যক্রম। গত ২৯ আগস্ট ইউএনওর কাছে জড়িত এসব ব্যক্তির নামের একটি তালিকা দেন হাবাসপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউল হক। এতে হাবাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান, স্থানীয় বিএনপি নেতা আবদুল লতিফ খানের ছেলে জেমস খান, চরপাড়ার আবদুল হাই, আরিফ শেখ, বাবলু মল্লিক, মাসুদ মল্লিক, আবজাল, কামাল সরদার, আনিছ মণ্ডল, আলাই মণ্ডল, শাহেব আলী মণ্ডল, হজ্জত খাঁ, মান্নান প্রামাণিক, শহিদ প্রামাণিক, নিজাম শেখ ও লিটন শেখ নামের ১৬ সদস্যের নাম আছে। তাঁরা প্রত্যেকেই স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে জড়িত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, আগে স্থানীয় মনোয়ার হোসেন জনির (আগে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিমের ডান হাত বলে পরিচিত) নেতৃত্বে জিয়া মণ্ডল, রকি, সুমন, লেবু খাঁ চরপাড়া বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন বালুর ব্যবসা করতেন। তাঁদের অনেকে অস্ত্রধারী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলেনি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সবাই পালিয়ে যান। পরে তাঁদের চাতাল (বালুর জমিয়ে রাখার স্থান) দখলসহ বালু ব্যবসায় নামে বিএনপির স্থানীয় এক গ্রুপ।
গত বৃহস্পতিবার দেখা যায়, বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন দুটি বড় পুরোনো বালুর চাতাল আছে। এর ১০০ গজ দূরে পদ্মা নদীতে সারিবদ্ধ ২০টির মতো বালুভর্তি বাল্কহেড রাখা। অদূরে হাবাসপুর এবং সুজানগর উপজেলার সীমান্তবর্তী পদ্মার চর থেকে বালু তোলা হচ্ছে। বেড়িবাঁধ ঘেঁষে নতুন আরও আটটি চাতালে শ্রমিকেরা বাঁশের খুঁটি পুতেছেন, কেউ জাল ঘিরছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে হাবাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবদুল লতিফ খান আজ শনিবার দুপুরে বলেন, ‘আমি বালু উত্তোলনে জড়িত নই। আমার ছেলে জেমস খানসহ এলাকার লোকজন সুজানগর থেকে বালু কিনে এনে ব্যবসা করছেন। উচ্চ আদালতের কাগজপত্র নিয়ে বৈধ উপায়েই মাত্র ব্যবসা শুরু করেছে।’
তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বৈধভাবে ব্যবসা করলেও পাশের বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কলাবাগান এলাকায় পদ্মা নদী থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ আলী খান ও তাঁর লোকজন অবৈধভাবে বালু তুলে ব্যবসা করছেন। তাঁদের কাছে কোনো ধরনের কাগজপত্র নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করেন পাংশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. চাঁদ আলী খান। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাহাদুরপুর কলাবাগানের কোথায় বালু তোলা হচ্ছে, আমার জানা নেই, কখনো শুনিও নাই। এ ধরনের কাজের সঙ্গে আমি জড়িত নই।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার কারণেই প্রভাবশালীর পদ্মা থেকে অবৈধভাবে বালু তুলতে পারছেন বলে মন্তব্য করছেন ইউএনও মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সহকারী ভূমি কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনে হাবাসপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান, তাঁর ছেলেসহ ১৭ জন জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত ৩০ আগস্ট সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে এসব কার্যক্রম বন্ধ করলেও দুই দিন পর আবার শুরু করেছে বলে জানতে পেরেছি। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।