চট্টগ্রামের পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্স নিয়ে আসলে কী হচ্ছে
চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সৈকতসংলগ্ন এলাকায় ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। দুই বছর আগে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কবে কাজ শেষ হবে, তা কেউ বলতে পারেন না।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পারকি সৈকতসংলগ্ন এলাকায় ১৩ দশমিক ৩৩ একর জায়গায় শুরু হয় ৭৯ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি। মাঝখানে দীর্ঘদিন বন্ধও ছিল প্রকল্পের কাজ।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ওই প্রকল্পের অধীনে গড়ে তোলা হচ্ছে ১০টি সিঙ্গেল কটেজ (প্রতিটি ৮০০ বর্গফুটের), ১ হাজার ৩৫০ বর্গফুটের ৪টি ডুপ্লেক্স কটেজ, ৩ তলাবিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবন; যাতে রয়েছে অফিস ভবন, রেস্তোরাঁ। প্রতিটি তলার আয়তন ৬ হাজার ৩২৩ বর্গফুট। তিনতলাবিশিষ্ট সার্ভিস ব্লক।
এ ছাড়া অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে সাবস্টেশন ভবন (১ হাজার ৫০ বর্গফুট), অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, সিকিউরিটি রুম, দুটি পিকনিক শেড (টয়লেট, রান্নাঘরসহ প্রতিটি ১ হাজার ৭০৮ বর্গফুটের)। এ ছাড়া ওই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে হ্রদ ও শিশুদের খেলাধুলার জায়গা।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের কাজগুলোকে তিন ভাগে বাস্তবায়ন করছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে সীমানাপ্রাচীর ও গেট পোস্টের কাজ করছে রাজ করপোরেশন। বালু ভরাট, হ্রদ, ভেতরের রাস্তা ও নালার কাজ নিয়াজ ট্রেডার্স এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য কাজ করছে দেশলিংক লিমিটেড। তার মধ্যে দেশলিংক লিমিটেডের দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পটি সময়মতো শেষ করতে পারেনি।
গত শনিবার দুপুরে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক পার হয়ে ভেতরে শেডের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। কটেজগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলেও পলেস্তারা ও আস্তরণের কাজ শেষ হয়নি। বিদ্যুৎ লাইন টানা হলেও সংযোগ দেওয়া হয়নি। একটি মাল্টিপারপাস ভবনসহ দুটি ভবনের কাজ শেষ হয়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, পারকি সৈকতের পাশে ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত তারকা মানের অতিথিশালা নির্মাণের কোনো প্রয়োজন না থাকলেও সেটি করা হয়েছে। অথচ মাত্র ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন করপোরেশনের পর্যটন কমপ্লেক্সের কাজটি শেষ করা হয়নি, যা রহস্যজনক।
স্থানীয় লোকজন আরও জানান, পারকি সৈকতকে ঘিরে হাতে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এখানকার দৃশ্য বদলে যেত এবং এলাকাটি সমৃদ্ধ হতো। এর ফলে সৈকতে দেশি-বিদেশি পর্যটক বেড়াতে আসতেন এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসত এলাকায়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘসূত্রতার কারণে পুরো প্রকল্পটি থমকে আছে।
গত ৩০ নভেম্বর সকালে পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। এত সময় পেয়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন পর্যটন উপদেষ্টা।
জানতে চাইলে পারকি সৈকত পর্যটন কমপ্লেক্সর প্রকল্প পরিচালক গোলাম মাহমুদ কবির বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাইলে ছয় মাসও লাগার কথা নয় কাজ হতে।
গোলাম মাহমুদ কবির আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সরকারের পর্যটন উপদেষ্টা।
প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত কাজ বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান দেশলিংক লিমিটেডের প্রতিনিধি বাবুল হকের সঙ্গে দেখা হলেও তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।