‘উন্নয়ন ভোগ করব নৌকার, আর ভোট দেব অন্য জায়গায়, তা হবে না’
নৌকায় ভোট না দিলে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই বলে ভোটারদের হুমকি দিয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার দুই আওয়ামী লীগ নেতা। গত রোববার রাত ১০টার দিকে উপজেলার পৃথক দুই স্থানে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের নৌকার প্রার্থী আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হকের প্রচারণায় এ ধরনের বক্তব্য দেন ওই দুই নেতা। তাঁদের বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত রোববার রাত ১০টায় উপজেলার সাহারবাটি বাজারে নৌকা প্রতীকের পক্ষে একটি জনসভা হয়। সেখানে সাহারবাটি ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আপনারা ভালো আছেন, সুন্দর আছেন। আপনারা কীভাবে ভালো থাকবেন, তা আপনারা নির্ণয় করবেন। আপনারা ভোট দিলে ভালো থাকবেন। এটা মনে রাখবেন, এ দেশ চালাচ্ছেন শেখ হাসিনা। কীভাবে এই দেশ পরিচালনা করতে হবে, তা তিনি খুব সুন্দর করে জানেন। আপনাদের নিয়ে এই দেশ তথা সাহারবাটি ইউনিয়নের মানুষকে সাথে নিয়ে সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ করে যাব। তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ, যদি ভোট দিতে আসেন, তবে অবশ্যই নৌকায় সিল মারতে হবে। আমি এই এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবে একটা কথা বলে দিলাম, যদি আপনারা নৌকায় সিল মারতে পারেন তবে আসবেন, নতুবা ঘরে বসে থাকবেন। ভোট সেন্টারে এসে কোনো প্রকারের ব্যবহার-আচার খারাপ পেলে সে দায়ভার আমাকে দিতে পারবেন না।’
এ সময় ওই জনসভায় গাংনী পৌর মেয়র আহম্মদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুর ইসলাম, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম আলী উপস্থিত ছিলেন। হুমকি দেওয়া মশিউর রহমানের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাহারবাটি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বজলুর রহমানের ছেলে।
এভাবে প্রকাশ্যে জনসভায় ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করছেন নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা। অবশ্যই নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিকে এই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রায় কাছাকাছি সময় উপজেলার বামন্দী বাজারে নৌকার একটি পথসভা হয়। সেখানে বামন্দী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সহিদুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলি, নৌকা মার্কায় ভোট না দিতে চাইলে, না দিতে পারলে তাঁর সেন্টার পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই। নৌকা মার্কায় ভোট দিতে চাইলে সেন্টার পর্যন্ত যেতে হবে। না দিতে পারলে সেন্টারে যাওয়ার দরকার নেই। আমরা বুকে সিল লাগাব নৌকার, উন্নয়ন ভোগ করব নৌকার, আর ভোট দেব অন্য জায়গায়, তা হবে না।’
এই দুই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেন সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি।
মকবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এভাবে প্রকাশ্যে জনসভায় ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করছেন নৌকার কর্মী-সমর্থকেরা। সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছেন তাঁরা। অবশ্যই নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটিকে এই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী মকবুল হোসেন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মেহেরপুর-২ আসনে এই দুই প্রার্থী ছাড়া জাতীয় পার্টির কেতাব আলী (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির আব্দুল গণী (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের (মুক্তিজোট) মো. শাহজালাল (ছড়ি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী গোলাম রসুল (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আল ফারুক (ডাব) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।