মৌলভীবাজারে বিভেদ ভুলে জেলা বিএনপির দুই পক্ষের বৈঠক, একসঙ্গে চলার সিদ্ধান্ত
বিভেদ ভুলে প্রায় পাঁচ বছর পর মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির দুটি পক্ষ একই ছাদের নিচে একসঙ্গে বৈঠক করেছে। এতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। বৈঠকে এখন থেকে একসঙ্গে পথচলা ও কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর গত মঙ্গলবার রাতে কমিটির আহ্বায়ক ফয়জুল করিমের (ময়ূন) মৌলভীবাজার শহরের বাসভবনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ৪ নভেম্বর ঘোষিত ৩২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক হয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম। জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানসহ অন্যরা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
নতুন আহ্বায়ক ফয়জুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ বছর পর আমরা এক জায়গায় বসেছি, একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ও আমার প্রচেষ্টায় জেলা বিএনপির বিবদমান দুই পক্ষের বিভক্তির অবসান হয়েছে। এখন থেকে জেলা বিএনপিতে কোনো বিভেদ-বিভক্তি নেই। সব দলীয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে ঐক্যবদ্ধভাবে, একসঙ্গে।’
ফয়জুল করিম আরও বলেন, ‘আমাকে জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়ার পরই দলের দীর্ঘদিনের বিভক্তির অবসান ঘটাতে উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর আগেও বিভেদ মেটানোর ক্ষেত্রে আমার প্রচেষ্টা ছিল, তখন নানা কারণে ব্যর্থ হয়েছি। দায়িত্ব পেয়ে আমি প্রথমবারের মতো আহ্বায়ক কমিটির সব সদস্যকে নিয়ে বৈঠকে বসি। সেখানেই দীর্ঘদিনের বিভক্তির অবসান হয়েছে।’
জেলা বিএনপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০১৯ সালের ১১ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন। ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের জ্যেষ্ঠ ছেলে সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হন মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা মিজানুর রহমান। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর কিছুদিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে জেলা বিএনপির সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এভাবে কিছুদিন চলার পর নানা মতবিরোধে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অল্প কিছুদিন একসঙ্গে চললেও পরে আর টেকেনি। বিবাদ আরও বাড়ে। স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। দুই পক্ষ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পৃথকভাবে পরিচালনা করেছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা কমিটির মেয়াদ হচ্ছে দুই বছর। সেই অনুসারে ২০২১ সালে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে নানা কারণে জেলা কমিটির সম্মেলন ও নতুন কমিটি গঠন হয়নি। এবার প্রায় পাঁচ বছর পর নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলো। এই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর দেশ-বিদেশে অবস্থান করা দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস লক্ষ করা গেছে। ফেসবুকে জেলা কমিটির নতুন নেতৃত্বকে অভিনন্দনও জানানো হচ্ছে। অনেকে দলকে নিয়ে তাঁদের নানা রকম প্রত্যাশার কথা ফেসবুকে জানিয়েছেন। আহ্বায়ক কমিটিতে আরও কাকে নেওয়া যেত, সে রকম প্রত্যাশার কথাও লিখছেন কেউ কেউ।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কাছে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে অদুদ আলম নামের এক সমর্থক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘১. দলে ঐক্য ফিরিয়ে আনা, ২. ত্যাগী, যোগ্য নেতা-কর্মীদের দলীয় কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং ৩. দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা উচিত।’
নতুন আহ্বায়ক ফয়জুল করিমের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন, মিজানুর রহমান, আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, আব্দুল মুকিত, আশিক মোশারফ, হেলু মিয়া, বকসী মিছবাউর রহমান, মতিন বক্স, মনোয়ার আহমেদ রহমান, ফখরুল ইসলাম, মারুফ আহমদ, স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, বকসী জুবায়ের আহমেদ, মুহিতুর রহমান প্রমুখ। বৈঠকে একসঙ্গে দলের সব কার্যক্রম পরিচালনা ও পথচলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জেলা বিএনপির সব পক্ষই অনেক দিন পর একসঙ্গে বসেছে। বিএনপির ঐক্যবদ্ধ কাজের পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সবার মধ্যে কথা হয়েছে, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, যাতে দলে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি না হয়। তিনি আরও বলেন, এবার বিপ্লব ও সংহতি দিবস দুই ব্যানারে হওয়ার কথা ছিল, এখন সবকিছু এক ব্যানারে হবে। এ ছাড়া আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে সব উপজেলা ও পৌর কমিটির সম্মেলন হবে। এরপর জেলা কমিটির সম্মেলন হবে।