পুড়ে যাওয়া সন্তানের চিকিৎসা দিতে দেরি, নার্সের ওপর হামলা

গরম চা শরীরে পড়ে পুড়ে যাওয়া ১৫ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়েছিলেন মো. রাব্বি নামের এক বাবা। সঙ্গে শিশুটির দাদা ও এক স্বজনও ছিলেন। শিশুটির চিকিৎসাসেবা পেতে দেরি হওয়ায় এক নার্সের ওপর হামলা করেন বাবা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আজ রোববার দুপুরে ভুক্তভোগী জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স মো. মহিউদ্দিন বাদী হয়ে সদর থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা পাঁচজনের নামে লিখিত এজাহার দিয়েছেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের খোলাপাড়া এলাকার মো. রাব্বি (২৫), তাঁর বাবা হাসান তারেক (৫৫) ও তাঁদের স্বজন পঞ্চগড় পৌরসভার জালাসী এলাকার মানিক হোসেন (৪২)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার পর গরম চা পড়ে মুখ, বুক ও পেট ঝলসে যায় ১৫ মাস বয়সী শিশু আয়ানের। পরে তাকে নিয়ে শিশুটির বাবা রাব্বি ও দাদা হাসান তারেক সদর হাসপাতালে ছুটে যান। দ্রুত চিকিৎসক রোগী না দেখা, শিশুটিকে পর্যাপ্ত মলম না দেওয়া ও দ্রুত ভর্তি না করাসহ নানা অভিযোগ তুলে রাব্বি নার্সদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে তিনি মহিউদ্দিন নামের জ্যেষ্ঠ এক নার্সকে কিল-ঘুষি মারেন। আজ দুপুরে কয়েক জন নার্স থানায় গিয়ে মামলার এজাহার জমা দেন।

ভুক্তভোগী জ্যেষ্ঠ স্টাফ নার্স মহিউদ্দিন বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালে আনার সময় মৃত অবস্থায় আনা এক রোগী ছিল। এর বাইরে অন্যান্য রোগী দেখা নিয়ে চিকিৎসকেরা ব্যস্ত ছিলেন। তারপরও তাঁরা শিশুটিকে মলম লাগানোসহ জরুরি সেবা দিচ্ছিলেন। শিশুটির সঙ্গে আসা লোকজনের উগ্র আচরণের কারণে শুরু থেকেই সেবা বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। একপর্যায়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে করতে তাঁরা তাঁর গায়ে হাত তোলেন।

শিশুটির দাদা হাসান তারেক বলেন, ‘আমরা যখন আমার নাতিকে নিয়ে জরুরি বিভাগে ঢুকি, তার আগেই মৃত ব্যক্তিকে সেখান থেকে বের করা হয়েছিল। আমি দীর্ঘ সময় শিশুটিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ডাক্তার আমার নাতিকে একবারও দেখেনি। তারা অবহেলা করছিল। তারা আমার নাতির পোড়া অংশে মলম লাগিয়ে দেয়। অর্ধেকটা মলম দিয়ে আবার অর্ধেকটা নিয়ে নেয়। আমি বারবার বলছিলাম পুরোটা দেন। আমরা বৃষ্টি কমলে বাইরে থেকে কিনে দিয়ে দেব। কিন্তু তারা শুনছিল না। আমার ছেলে তার সন্তানের এমন অবস্থা দেখে কিছুটা রেগে গিয়ে একজনকে একটা ঘুষি দিয়েছে। পরে বাধ্য হয়েই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন শুনতেছি, তারা নাকি আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে।’

পঞ্চগড় সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রঞ্জু আহম্মেদ বলেন, ‘মামলার এজাহার পেয়েছি। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’