রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার শেষ দিনে কবি ও লেখকদের জমজমাট আড্ডা
ঘড়ির কাঁটায় রাত ১০টা বেজে গেছে। রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠের শেষ প্রান্তের দু–একটি স্টলে ইতিমধ্যে বই গোছানো চলছে। মেলার প্রবেশপথে তখনো চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন কথাসাহিত্যিক মাসউদ আহমাদ, কবি ও কথাকার মঈন শেখ, ছড়াকার হাসনাত আমজাদ, শিশুসাহিত্যিক মাসুম আওয়াল, কবি সুমন শামসসহ আরও কয়েকজন কবি–সাহিত্যিক।
মাসউদ আহমাদ বললেন, ‘রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার শেষ দিনে আমি এসেছি। রাজশাহী আমার বেড়ে ওঠার শহর হলেও এখন খুব কম আসা হয়। তবে এবার রাজশাহীতে এসে বেশ আনন্দ হলো। বইমেলায় বইপত্র অল্প কিনেছি, তবে অনেক কবি ও লেখকের সঙ্গে দেখা হলো। আমি নিজে একটু লেখালেখির চেষ্টা করি। এখানে এসে অন্তত ৫ জন পাঠককে অটোগ্রাফ দিলাম।’
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত আট দিনের বইমেলা বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) শেষ হয়। রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় নগরের কালেক্টরেট মাঠে মেলায় ৮টি সরকারি, স্থানীয় ২টি, ঢাকার ৭৩টি ও ৬টি সেবাধর্মী স্টল ও প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করে।
মেলা চলাকালে বিভাগের ৮ জেলা থেকে আগত শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় প্রতিদিন মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, শিশু-কিশোরদের কুইজ, চিত্রাঙ্কন ও অন্যান্য প্রতিযোগিতাসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য প্রতিদিন আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়। সভায় বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ পাঠ করেন আলোচকেরা। শীতের হরেক রকম পিঠা, কেক, পায়েস ও চায়ের আয়োজন আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
মেলা নিয়ে কবি ও কথাকার মঈন শেখ বললেন, বইমেলা হলো লেখক ও পাঠকের মিলনমেলা। শেষ দিন উপচে পড়া ভিড় না থাকলেও যথেষ্ট প্রাণ ছিল মেলায়। কারণ লেখক এসেছিলেন বেশ। প্রতিদিনের অনুষ্ঠানগুলো কবি-সাহিত্যিকদের সমন্বয়ে হলে আরও উপভোগ্য হতো। ভবিষ্যতে এই খরা কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কথাসাহিত্যিক মাসউদ আহমাদ বলেন, বড় পরিসরে বইমেলা এবং শেষ দিন, সে কারণে পাঠকও ছিল চোখে পড়ার মতো। বেশ কয়েকজন লেখকের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে নানা রকম অভিজ্ঞতা হলো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, পাঠকের বদলে যাওয়া এবং নিজেদের লেখালেখি নিয়ে তাঁরা কী ভাবছেন জানা গেল।
রাত সাড়ে দশটার পরেও রাজশাহী মেট্রোপলিটন কলেজের ইন্টারমিডিয়েট শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারাবী আহমেদ ‘মার্ডার অন দ্য পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ বই কিনে বের হচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে নওগাঁর একটি কলেজের স্নাতক উত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজের হাতে দেখা গেল ‘কলকাতার কেলেঙ্কারি’ বইটি। হুমায়ূন আহমেদের ‘সেদিন চৈত্রমাস’ বইটি কিনেছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সায়মা আহমেদ। তাঁরা বললেন, শেষ সময়ে হলেও বইমেলায় এসে ভালো লাগছে। তাই বই কিনলেন।
মেলা শেষে বেচাকেনার বিষয়ে জানতে চাইলে মেলায় স্টল দেওয়া রুশদা প্রকাশ এর আব্দুল্লাহ আল বাকী বললেন, ‘মোটামুটি ভালোই হয়েছে। তবে পরবর্তী সময় আরও ভালো বেচাকেনা হবে। মেলা জমজমাট হবে বলে আমরা আশাবাদী।’ মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী রোহান হুসাইন বললেন, আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি তবে মোটামুটি হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের সেলস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ উৎসব মোসাদ্দেক বললেন, ‘বইমেলার জন্য পরিবেশ ও আয়োজন ভালো ছিল। কিন্তু আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি।’