খুলনা শহরে ভোটের শেষে ফিরেছে লোডশেডিং, অতিষ্ঠ নগরবাসী
খুলনা নগরের টুটপাড়া জোড়াকল বাজার এলাকায় আজ বুধবার ভোর থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত ছয়বার লোডশেডিং হয়েছে। প্রতিবার প্রায় এক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়েছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
বিলকিস বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে লোডশেডিং হচ্ছিল। অথচ খুলনায় লোডশেডিং ছিল না। অনুমানই করেছিলাম, নির্বাচন শেষে বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে পড়তে হবে। অনুমান সত্যি হয়েছে।’
নগরের খালিশপুর থানার আওতাধীন বাস্তহারা এলাকায় বুধবার সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত দুই দফায় এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ ছিল না। ওই এলাকার বাসিন্দা রুমানা আক্তার বলেন, ভোটের পরদিন থেকেই লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ গেলে এক ঘণ্টার আগে আসছে না।
গত মাসের শেষের দিক থেকে দেশজুড়ে ভয়াবহ লোডশেডিং হচ্ছিল। খুলনাও এর বাইরে ছিল না। তখন দিনের বড় একটা সময় বিদ্যুৎ না থাকায় খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক।
তিনি তাঁর স্ত্রী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহারকে এ বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। সমস্যা সমাধানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্ত্রীকে বলতে বলেছিলেন। উপমন্ত্রী বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। ওই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
৫ জুন নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগের সময় তালুকদার আবদুল খালেক বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘খুলনায় কয়েক দিন আগে বেশি পরিমাণে লোডশেডিং হচ্ছিল। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে আমি ফোন করেও পাইনি। তারপর আমার স্ত্রীকে জানিয়েছিলাম লোডশেডিং নিয়ে সংসদে গিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। সমস্যার আশু সমাধান হয়েছে। এর পর থেকে তো শহরে বিদ্যুৎ তেমন যাচ্ছে না।’
১২ জুন খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের আগের ১০ দিন শহরে লোডশেডিং ছিল না। তবে গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি বদলে গেছে। গতকাল থেকে দিনে বেশ কয়েকবার লোডশেডিং হচ্ছে।
নগরের পূর্ব বানিয়াখামার এলাকার বুধবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে তিন দফায় বিদ্যুৎ ছিল না। ওই এলাকার বাসিন্দা মো. রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, খুলনার মানুষ ভোটের আগের কয়েক দিন বেশ আরামেই ছিল। ভোট শেষ, এখন সেই ভোগান্তি আবার শুরু। সামনে পরিস্থিতি কতটা খারাপ হবে, তা কে জানে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) তথ্যানুযায়ী, গত দুই দিন খুলনা শহরে চাহিদার বিপরীতে ২০ শতাংশের মতো বিদ্যুৎ-ঘাটতি ছিল। গতকাল বুধবার বেলা দুইটায় ওজোপাডিকোর আওতায় থাকা খুলনা, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা শহর ও ২০টি উপজেলা শহর এলাকায় ৬৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৫৯৮ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি ছিল ৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
একই সময়ে শুধু খুলনা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৮৮ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ১৬০ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ২৮ মেগাওয়াট। আগের দিন মঙ্গলবার বেলা দুইটার সময় ওজোপাডিকোর আওতাভুক্ত পুরো এলাকায় ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। ওই দিন একই সময়ে শুধু খুলনা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ ছিল ১২৯ মেগাওয়াট। খুলনা শহরে ওই সময় বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল ৩১ মেগাওয়াট।
ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক (পরিচালন) মোহা. শামছুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় কিছু এলাকায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
খুলনার উপজেলা পর্যায়ে লোডশেডিংয়ের অবস্থা আরও খারাপ। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, খুলনায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৪ লাখ। জেলায় পল্লী বিদ্যুতে সর্বোচ্চ ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। চাহিদার মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। ৩৫ শতাংশের মতো ঘাটতি থাকছে।
এদিকে বুধবার দুপুরে খুলনা নগর বিএনপি অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে ১৬ জুন খুলনায় পদযাত্রা কর্মসূচি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে। নগরের কে ডি ঘোষ রোড এলাকার বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে তখন লোডশেডিং হয়।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যিনি মেয়র হয়েছেন, তিনি ভোটের আগে তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, এ রকম লোডশেডিং হলে ভোট পাবেন না। বিষয়টি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে জানাতে বলেছিলেন। সে কারণে ভোটের দিন পর্যন্ত খুলনায় লোডশেডিং ছিল না। আমরা তখন বলেছিলাম, নির্বাচন সামনে রেখে এই কথাগুলো বলা হচ্ছে। ঠিক সেই কাজ করা হয়েছে। ভোটের পর থেকেই লোডশেডিং শুরু হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনার সভাপতি আইনজীবী কুদরত-ই-খুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনছি ভোটের কারণেই লোডশেডিং বন্ধ ছিল। এটা হয়ে থাকলে সেটা তো ভোটারদের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা।’