‘ঝালমুড়ি বেইচ্চা সংসার চলে না, কর্জ করা লাগে’

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটকের ভেতরে কিংবা সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন মো. সোহেল। রোববার বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থী ও পথচারীদের কাছে কাগজের ঠোঙায় ঝালমুড়ি বিক্রি করেন মো. সোহেল (৩৯)। রোববার বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজ ফটকের ভেতরে দাঁড়িয়ে তাঁকে ঝালমুড়ি বিক্রি করতে দেখা যায়। এ থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই টানাপোড়েনে চলে তাঁর সংসার।

ঝালমুড়ি বিক্রির ফাঁকে মো. সোহেলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, দেড় দশক ধরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটকের ভেতরে কিংবা সামনে ও বিভিন্ন মোড়ে ঝালমুড়ি বিক্রি করছেন। প্রতিদিন সকাল ৮টায় কাজে নামেন, শেষ করেন রাত ৮টায়। গড়ে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন কেজি ঝালমুড়ি বিক্রি করেন। আবার কোনো কোনো দিন ৪ কেজিও বিক্রি হয়। বাজার থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে মুড়ি কিনে সেগুলো ঝাল-মসলা দিয়ে বানিয়ে বিক্রি করেন ৩০০ থেকে ৩২৫ টাকায়। খরচ বাদে প্রতি কেজি ঝলমুড়িতে লাভ হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। ঝড়বৃষ্টি থাকলে, শরীর অসুস্থ হলে কিংবা স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলে ঝালমুড়ি বিক্রি বন্ধ রাখেন।

আয়ের চেয়ে সংসারের খরচ বেশি। সংসার লইয়া এহন আর পারতাছি না। কী করুম? যেই কাম শিখছি, হেইডাই করতাছি। তয় ভিক্ষার চাইতে কাম কইরা খাওন ভালা।
মো. সোহেল, ঝালমুড়ি বিক্রেতা

মো. সোহেল চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার উত্তর উপাদী গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে। চার বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সোহেল সবার বড়। বাবা-মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী ও আয়রোজগার তেমন না থাকায় পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ করতে হাঁপিয়ে উঠেছেন তিনি।

আলাপকালে সোহেল বলেন, ‘১৫ বছর ধইরা স্কুল-কলেজের গেটে ও বিভিন্ন জায়গায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতাছি। ঝালমুড়ি বেইচ্চা সংসার চলে না, কর্জ করা লাগে। জমিজমা কিছুই নাই। ঝালমুড়ি বিক্রির ওপরই চলন লাগে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। আয়ের চেয়ে সংসারের খরচ বেশি। সংসার লইয়া এহন আর পারতাছি না। কী করুম? যেই কাম শিখছি, হেইডাই করতাছি। তয় ভিক্ষার চাইতে কাম কইরা খাওন ভালা।’

ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান মো. সোহেল। রোববার বেলা ১১টার দিকে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজ এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাসে ২০ থেকে ২২ দিন ঝালমুড়ি বিক্রি করেন সোহেল। এতে তাঁর মাসিক আয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। এ টাকায় বাবা-মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ চালাতে হয়। কাপড়, ওষুধপথ্য কিনতে হয়। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিতে হয়। চার বোনের বিয়ে হলেও মাঝেমধ্যে তাঁদের টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করেন সোহেল। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র তিনিই। তাঁর একার আয়ে পুরো পরিবার নির্ভরশীল হওয়ায় পড়েছেন বিপাকে।

সোহেল জানালেন, তাঁর শরীরের অবস্থা ভালো নয়। পেটের ব্যথা ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা আছে। সব সামলে প্রতিদিন কাজে ছোটেন। মাসে যা রোজগার করেন, তা দিয়ে খরচ মেটে না। প্রায়ই টাকা ধার করতে হয়। কয়েক মাসে স্বজনদের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার করেছেন। এত টাকা কীভাবে শোধ দেবেন, জানেন না। তাই খুব হতাশায় আছেন।

মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক কামাল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝালমুড়ি বিক্রেতা সোহেলকে চেনেন তিনি। তাঁর আচার-ব্যবহার ভালো। তাঁর হাতের ঝালমুড়ি খেতেও ভালো লাগে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফটকে তিনি পরিচিত মুখ। ঝালমুড়ি বিক্রির মাধ্যমেই চলে তাঁর বেঁচে থাকার লড়াই।