বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট সরকারি আরসি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শহিদুল ইসলাম একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষার প্রবেশপত্র বাবদ ৫০০ টাকা করে দাবি করছেন, এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার পাশাপাশি কলেজটির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন।
ভিডিওটিতে মো. শহিদুল ইসলামকে তাঁর কার্যালয়ে বসে একজন শিক্ষার্থীর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘টিএনওর সম্মানী পাঠাইতে হবে, ডিসির সম্মানী পাঠাইতে হবে, এডিসির সম্মানী পাঠাইতে হবে, দুইজন ট্যাগ অফিসার আছেন, তাঁদের সম্মানী দিতে হবে। আমারে ২১ দিনের ট্রেনিংয়ে নিছে, আমারে দিছে ৫৩ হাজার টাকা, আমার খরচ হইছে ১ লাখ টাকা।’
কথোপকথনের ওই ভিডিও সোমবার দুপুরের বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এই দিন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের জন্য ৫০০ টাকা দাবি করার পর ওই শিক্ষার্থী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের কাছে যান। তখন তাঁদের মধ্যে এই কথোপকথন হয়।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়ার সময় কোনো অর্থ নেওয়ার বিধান নেই। এটি বেআইনি। এটা যদি আগের বকেয়া হয়, তা-ও নেওয়া যাবে না। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ। আরসি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ভিডিওটি তাঁদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে তাঁদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের পদে থেকে শিক্ষার্থীদের সামনে এ ধরনের কথা বলা ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন সচেতন নাগরিক কমিটির বরিশাল জেলা শাখার সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা। তিনি বলেন, ‘একজন শিক্ষকের প্রথম ও প্রধানতম শর্ত হলো, তাঁর জোরালো নৈতিকতা। কারণ, তাঁরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর। এটা না থাকলে কীভাবে সুনাগরিক পাব আমরা?’
কথোপকথনের বিষয়ে জানতে আজ বুধবার দুপুরে অধ্যক্ষ মো. শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি।
ভিডিওতে দেখা যায়, ৫০০ টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র নিতে না পারলে কী সমস্যা হবে, ওই শিক্ষার্থী তা অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান। তখন অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটি তোমার উইশ। তুমি আমার সঙ্গে যদি যুদ্ধ করতে নামো, তাহলে যুদ্ধ কনটিনিউ করতে পারো, সমস্যা নেই। সেকেন্ড ইয়ার, থার্ড ইয়ার, তুমি যুদ্ধ করে যেতে পারো, যুদ্ধ করা তোমার অধিকার।’
শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়ার জন্য টাকা নেওয়াটা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। আজ বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের নজরে আসার পর মঙ্গলবার আমরা অধ্যক্ষের এ বক্তব্যের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছি।’
কথোপকথনের ভিডিও ছড়ানোর পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগ চেয়ে গতকাল কলেজের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের শান্ত করে। এরপর মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব হোসেন কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।
কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আসাদ বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভিন্ন সময় বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের থেকে অতিরিক্ত ফি নিয়ে তিনি ডিসি, এডিসি, ইউএনওদের সম্মানী পাঠান বলে ঘোষণা দিচ্ছেন। আমরা তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’