বন্যার পর নদীভাঙন, আতঙ্কে ৩০০ পরিবার
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম অলিনগরের মোল্লাবাড়ি এলাকাটি ফেনী নদীর সঙ্গে লাগোয়া। সাম্প্রতিক বন্যায় এই এলাকা পুরোপুরি তলিয়ে যায়। এখন নদীর দক্ষিণপাড়ে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। বসতঘর হারানোর আতঙ্কে দিন কাটছে অন্তত তিন শ পরিবারের।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভাঙনকবলিত মোল্লাবাড়ির পাশ দিয়ে গেছে ওবায়দুল হক খন্দকার সড়ক। এই সড়কের পাশেই কয়েক শ বসতঘর। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে ভাঙনে নদীতে তলিয়ে গেছে তিনটি পরিবারের রান্নাঘরসহ কয়েকটি বসতঘর। নদীতে বিলীন হয়ে যাবে, এমন ছোট–বড় অনেক গাছ কেটে স্তূপ করে রেখেছে আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, মিরসরাইয়ের পশ্চিম অলিনগর এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে নদী ভাঙছে। এবার অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভাঙনের ভয়াবহতা বেশি ছিল। গত ১৫ দিনে পশ্চিম অলিনগরের লিচুবাগান রাস্তার মাথা থেকে তেলিয়াছড়া পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গা ক্রমাগত ভাঙছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, গ্রাম লাগোয়া ফেনী নদীর অংশ থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনী নদীর গতিপথ কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এ কারণে নদীর তীব্র স্রোত জনবসতি এলাকায় আঘাত হেনেছে। শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
গত মঙ্গলবার বিকেলে কথা হয় নদীভাঙনে বসতঘর হারানো পশ্চিম অলিনগরের মোল্লাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা কৃষক জাকির হোসেনের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গত ২০ বছরে নদীর ভাঙনে তিনবার বসতঘর হারিয়েছেন তিনি। এবারও বন্যা–পরবর্তী সময়ে ভাঙন শুরু হয়। গত এক সপ্তাহে বসতঘরের ২৫ মিটার জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পরে সন্তানদের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আক্ষেপ করে জাকির হোসেন বলেন, ‘নদীর দিকে তাকালেই বুকটা হুহু করে ওঠে। কোথায় যাব, কার কাছে যাব, ভেবে কূল পাচ্ছি না।’
একই এলাকার বাসিন্দা মো. ইউনুছ পেশায় দিনমজুর। নদীতে তাঁর ঘরও বিলীন হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে ইউনুছ প্রথম আলোকে বলেন, ঘর হারানোর পর স্ত্রী, মা ও দুই সন্তানকে নিয়ে গ্রামের মধ্যেই একটি ভাড়া বাসায় উঠতে হয় তাঁদের। কিন্তু আয়ের সঙ্গে ব্যয় মিলছে না। ঘর ভাড়া দিয়ে অন্যান্য খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য তাঁর নেই।
মোল্লাবাড়ি এলাকায় নদীভাঙনের বিষয়ে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সম্প্রতি ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ভাঙনকবলিত এলাকাটিতে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তবে ভাঙন রোধে স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাঁরা চিঠি পাঠিয়েছেন।