সাতক্ষীরার আশাশুনি
দেবে যাওয়ার ১৪ মাস পরও হয়নি সংস্কার
মাঝখানের বড় অংশ দেবে যাওয়ায় লোকজনকে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবে ভারী গাড়ি চলাচল করতে পারছে না।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মরিচ্চাপ নদের ওপর বাঁকড়া সেতুটি দেবে গেছে এক বছর আগে। এর মধ্যে সেতুটি সংস্কার কিংবা ভেঙে নতুন করে নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বলছেন, সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)। দেবে যাওয়া সেতুটি সংস্কার কিংবা পুনর্নির্মাণ এলজিইডি করবে। অপর দিকে উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া সড়কটি এলজিইডির। কিন্তু সেতুটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় নির্মাণ করেছিল। সেতুটির ব্যাপারে ওই মন্ত্রণালয়কেই ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যে সাধারণ মানুষ চলাচলে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন সাতক্ষীরা, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, আশাশুনি, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁচ-ছয় হাজার মানুষ এ সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। কিন্তু মাঝখানের বড় অংশ দেবে যাওয়ায় তাঁদের এখন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবে ভারী গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। ভারী যানবাহন যাতায়াত করতে হচ্ছে ৮-১০ কিলোমিটার ঘুরে।
এলাকাবাসী জানান, সেতু নির্মাণের আগে মরিচ্চাপ নদ আশাশুনির বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করে রেখেছিল। ডিঙিনৌকা দিয়ে নদ পার হয়ে মানুষ আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতেন। কোনো খেয়ানৌকা কিংবা ঘাট না থাকায় প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে নদ পার হতে হতো। স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবির মুখে বুধহাটা ইউনিয়নের দক্ষিণে কুন্দুড়িয়া ও শোভনালী ইউনিয়নের উত্তরে বাঁকড়াকে সংযুক্ত করে এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। হঠাৎ করে ২০২২ সালের ৪ জুলাই সেতুটি মাঝ বরাবর দেবে যায়।
আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রশস্ত এই সেতুটি নির্মাণ করে। মরিচ্চাপ নদ খননের পর নদের প্রস্থ বেড়ে যাওয়ায় সেতুটি দেবে যায়।
৯ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির মাঝ বরাবর দেবে মরিচ্চাপ নদের পানিতে ছুঁয়েছে। সেতুটির পাশে পলেস্তারা খসে পড়েছে, রডে ধরেছে মরিচা। মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক থেকে মানুষ নেমে পায়ে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন।
স্থানীয় কুন্দুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁদের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী আসে বাঁকড়ার অপর পাশ থেকে। প্রতিদিন কয়েক শ ছেলেমেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুটি পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। সেতুটি সংস্কার না হওয়ার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, তা না হলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ইজিবাইকচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে এ সেতুটি পার হতে হয়। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশাশুনির পিআইও মো. সোহাগ খান বলেন, সেতুটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন দুই পাশে কাঁচা সড়ক ছিল। নদটিও ভরাট হয়ে ছোট হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওই সড়কটি এলজিইডি পাকা করার পাশাপাশি তাদের তালিকাভুক্ত করে নিয়েছে। ফলে ওই সড়কের ভেঙে পড়া সেতুতে তাঁরা কাজ করতে পারেন না।
আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী মো. নাজিমুল হক বলেন, পাকা করার অনেক আগে থেকেই এটি এলজিইডির সড়ক। তখন যেহেতু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে সেতু নির্মাণ করেছিল, তাদেরই সেতুটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করার কথা। এরপরও জনসাধারণের ভোগান্তির কথা বিবেচনা নিয়ে তিনি এ ব্যাপারে তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ৯ মাস আগে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো নির্দেশনা আসেনি।