হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার আগুয়া গ্রামটি এখন সুনসান। লোকজনের চোখে-মুখে আতঙ্ক। সে গ্রামের আবদুল কাদিরের বাড়িতে চলছে মাতম। তাঁর তিন সন্তানের কান্না থামছে না। তাঁর এক বছরের ছেলে জিহান বড় ভাই-বোনের কান্না দেখে কাঁদছে। জিহান বুঝতে পারছে না, তার বাবাকে সে আর কোনো দিন দেখতে পাবে না। এ আহাজারি শুধু কাদিরের এ পরিবারেই নয়, সিরাজ মিয়া ও লিলু মিয়ার বাড়িতেও চলছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বানিয়াচংয়ের আগুয়া গ্রামে একটি অটোরিকশার স্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানো নিয়ে স্ট্যান্ডের তত্ত্বাবধায়ক বদরুল আলমের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় অটোরিকশার চালক কাদির মিয়ার। একপর্যায়ে তাঁদের কথা–কাটাকাটির খবর আগুয়া গ্রামে পৌঁছালে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজন লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। প্রায় ৪০ মিনিট স্থায়ী এ সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে কাদির মিয়া (৩০), তাঁর আত্মীয় সিরাজ মিয়া (৫০) ও লিলু মিয়া (৫০) প্রাণ হারান।
নিহত ব্যক্তিদের জানাজা শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় গ্রামের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে দাফন করা হয় গ্রামের কবরস্থানে। দুপুরে নিহত ব্যক্তিদদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে।
আগুয়া গ্রামের লোকজন বলেন, একসঙ্গে গ্রামের তিনজন নিহত হওয়ার পর থেকে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মামলা-গ্রেপ্তারের ভয়ে অনেক বাড়ির পুরুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
সংঘর্ষে নিহত কাদির মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়। সবাই নিহতের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে এসেছেন। কাদিরের মা সেলিনা বেগম বলেন, ‘এভাবে এতগুলো মানুষ আমার ছেলেকে মারল। এখন আমি কাকে নিয়ে বাঁচব? নাতি-নাতনিরা বাবার কথা বলে। আমরা ওদের সান্ত্বনা দিতে পারি না। আমি এর বিচার চাই।’
চাচাতো ভাই আবদুল খালেক বলেন, কাদির ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিন শিশুসন্তান কীভাবে বড় হবে? কীভাবে চলবে, তা নিয়েই এখন ভাবনা তাঁদের।
স্বজনেরা জানান, সিরাজ মিয়ারও তিন সন্তান। তিনি ছিলেন কৃষিশ্রমিক। লিলু মিয়াও কৃষিকাজ করতেন। তাঁকে হারিয়ে অসহায় হয়ে গেছে তাঁর চার সন্তান। সন্তানদের বয়স ৩ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। লিলু মিয়ার মা সুন্দরী বেগম বলেন, ‘আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেছে। চার নাতি–পুতিরে নিয়ে এখন আমি কীভাবে বাঁচব?’
আগুয়া গ্রামের মিলন মিয়া বলেন, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তিনটি প্রাণ গেল। এখন পরিবারগুলোর কী হবে?
মন্দরী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ সামছুল হক বলেন, আগুয়া গ্রামে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা হৃদয়বিদারক ও পৈশাচিক। এ ধরনের ঘটনা এলাকাবাসী চান না। সমঝোতার মাধ্যমে এ সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব ছিল। কিন্তু কেউ ধৈর্য ধরল না। এখন তিনটি পরিবার প্রিয় মানুষদের হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেল।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত শুক্রবার দুপুরে সম্পন্ন হয়েছে। বিকেলে তিনটি লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এখনো মামলা হয়নি। দাফন শেষে হয়তো মামলা হবে।