‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যে নৌকায় উঠেছেন, সেটা আমি চালিয়েছি, বিশ্বাস হচ্ছে না’
নৌকাচালক আবদুল হালিমের জীবনে স্মরণীয় ঘটনাটি ঘটে গেছে আজ। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ তাঁর নৌকায় ভ্রমণ করেছেন। ২৬ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে আসা হালিমের কাছে ঘটনাটি এখনো স্বপ্নের মতো।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে গাবতলীর কাছে মিরপুর বড়বাজারে তুরাগ নদে ভ্রমণ করতে যান এমানুয়েল মাখোঁ। সেখানে ইকোপার্কের ঘাটে অবস্থিত চায়ের দোকান ও মিষ্টির দোকান ঘুরে দেখেন। কথা বলেন দোকানের মালিক ও কর্মচারীদের সঙ্গে। মাঝিদের নৌকাবাইচ ও জেলেদের জাল ফেলে মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করেন তিনি। সেখানে নৌকাভ্রমণ ও ঘোরাঘুরি মিলিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় অতিবাহিত করেন মাখোঁ। স্থানীয় চায়ের দোকানদারের সঙ্গে সেলফিও তোলেন মাখোঁ।
ইকোপার্ক ঘাটে আট বছর ধরে চা বিক্রি করেন মোহাম্মদ রাকিব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজও চা বিক্রি করছিলাম। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আসবেন জানতাম। কিন্তু তাঁর মতো বড় একজন মানুষ আমার দোকানে এসে আমারই ফোন নিয়ে সেলফি তুলবেন, জীবনেও কল্পনা করতে পারিনি। তিনি যখন আমার দোকানে আসেন, তখন আমার খুবই ভালো লাগছিল। আমি ওই ছবি ফেসবুকে দিয়েছি, আমার বউকে দেখিয়েছি। সবাই অনেক খুশি হয়েছে। এলাকার বন্ধুরা আমার ফেসবুকে ওই ছবির নিচে কমেন্ট করছে। আমার অনেক ভালো লাগছে।’
মাখোঁ ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির পানসি নামের নৌকায় তুরাগ নদ ভ্রমণ করেন। ওই নৌকার মাঝি ছিলেন আবদুল হালিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট যে নৌকায় উঠেছেন, সেটা আমি চালিয়েছি, এটা আমার জীবনের সেরা ঘটনা। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। তিনি (মাখোঁ) আমাদের সঙ্গে ইশারায় কথা বলেছেন আর থ্যাংক ইউ দিয়েছেন। আমি কোম্পানির নৌকা চালাই। এখানে অনেক মাঝি আছেন, কিন্তু আমার ভাগ্য ভালো বলেই প্রেসিডেন্টকে আমি নৌকায় করে ঘোরাতে পেরেছি। তিনি নৌকায় বসে নৌকাবাইচ দেখেছেন, জেলেদের মাছ ধরা দেখেছেন। ৪০ মিনিটের মতো তিনি আমার নৌকায় ছিলেন। তিনি একদম সাধারণ মানুষের মতো ঘোরাঘুরি করেছেন।’
এখানেই শেষ নয়। নৌকাভ্রমণ শেষে ফেরার পথে ইকোপার্ক–সংলগ্ন খাবারের দোকানে যান মাখোঁ। দোকানদার নুরুল ইসলাম তাঁকে জিলাপি, শিঙাড়া আর নিমকি পরিবেশন করে খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। দোকানদার নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি আমার দোকানে এলে আমি তাঁকে খাবার দিই। তিনি খাবার না খেলেও টিস্যু দিয়ে একটি শিঙাড়া নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে যান। তিনি যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে গেছেন। তাঁর সঙ্গে যেসব স্যার আসছিলেন, তাঁরা আমার দোকানে খাবারও খেয়েছেন। আমার খুবই ভালো লেগেছে যে একটি দেশের প্রেসিডেন্ট আমার দোকানে এসেছেন; এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!’
সাভার আমিনবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের তুরাগ নদে আগমন উপলক্ষে আমরা তিন–চার দিন ধরে নদীপথে ঘুরে ঘুরে এবং আমিনবাজার, কাউন্দিয়া ও বিরুলিয়া এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আজ বেলা ১১টার দিকে নদীর আশপাশের এলাকা উপভোগ করে ১টার দিকে তিনি চলে যান।’