রাস্তায় ইট বিছাল পিআইও দপ্তর, সেই ইট তুলে খোয়া বানাল এলজিইডি
গ্রামীণ সড়ক টেকসই করতে সবে ইট বিছানোর কাজ শেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়। সেই কাজের চূড়ান্ত বিলও পাননি ঠিকাদার। এর মধ্যে সেই সড়কে বিছানো ইট তুলে খোয়া বানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে।
পিআইও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রামীণ রাস্তা টেকসইকরণে হেরিং বোন বন্ডকরণ (এইচবিবি) প্রকল্পের আওতায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়িয়ার আজিজুল হকের বাড়ির সামনে থেকে কমরেড কম্পরাম সিংহ কমপ্লেক্স পর্যন্ত ৫০০ মিটার রাস্তার পাশাপাশি ধনতলা ইউনিয়নের ভান্ডারদহ বন্দরপাড়ের আতাবউদ্দীনের বাড়ির সামনে সেতু থেকে সোনাকান্দার সেতু পর্যন্ত ৫০০ মিটার রাস্তায় ইট বিছানোর জন্য গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করে পিআইও কার্যালয়। ঠাকুরগাঁও শহরের ঠিকাদার হাসান মাহমুদ কাজটি পান। ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৫ টাকা চুক্তিমূল্যে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর তাঁকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে কাজটি শেষ করেন ঠিকাদার।
সূত্র জানায়, কাজ শেষে ঠিকাদার বিল জমা দিলেও এখনো পাননি। এর মধ্যে পাড়িয়া ইউপি কার্যালয় থেকে ফুটানিরহাট পর্যন্ত ২ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করতে গত ১৩ মার্চ দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। কাজটি পায় বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৫ মে কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উত্তর পাড়িয়ার আজিজুল হকের বাড়ির সামনে থেকে কমরেড কম্পরাম সিংহ কমপ্লেক্স পর্যন্ত রাস্তায় বিছানো ইট তুলে খোয়া বানাতে শুরু করে।
আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, এলজিইডির পাকা সড়ক শেষে কাঁচা রাস্তায় ইট বিছানো। রাস্তার পাশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সাইনবোর্ড। সেখানে রাস্তা নির্মাণের নানা তথ্য লেখা। সাইনবোর্ডের আশপাশে ইটের খোয়া স্তূপ করে রাখা দেখা গেল।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘কদিন আগে কাঁচা রাস্তায় ইট বিছানো শেষ হলো। কাজ শেষ না হতেই রাস্তায় বিছানো ইট তুলে খোয়া করা হচ্ছে। দায়িত্বে থাকা লোকজনের কাছে জানতে পেরেছি, রাস্তাটি নাকি পিচঢালাই হবে।’ পাশে দাঁড়িয়ে জয়নালের কথা শুনছিলেন স্থানীয় সহিদুল ইসলাম। জয়নালের কথা কেড়ে নিয়ে তিনি বললেন, ‘রাস্তা যখন পাকা হবে, তখন ইট বিছানোর কাজ হলো কেন? এভাবে সরকারের টাকা অপচয়ের মানে কী?’
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পাড়িয়ায় সম্প্রতি কমরেড কম্পোরাম সিংহ স্মরণে কমপ্লেক্স করা হয়েছে। কমপ্লেক্স দেখতে অনেক দর্শনার্থী আসছেন। দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তায় ইট বিছানো হয়। ফেব্রুয়ারিতে কাজ শেষ হয়। এখনো ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে এলজিইডি রাস্তাটি পাকা করতে দরপত্র আহ্বান করেছে। নিযুক্ত ঠিকাদার রাস্তার ইট তুলে খোয়া করেছেন। এ নিয়ে তাঁরা বিড়ম্বনায় পড়েছেন।
এলজিইডির ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রকৌশলী সফিউল আলম বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, রাস্তাটি এলজিইডির ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত। দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে রাস্তায় ইট বিছানো হয়েছে। পরে এলজিইডি থেকে রাস্তাটি পাকা করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তার ইট তোলা শুরু করে। ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এমনটি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফছানা কাওছার প্রথম আলোকে বলেন, দুই দপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটি ঘটেছে। ঘটনাটি জানতে পেরে রাস্তায় বিছানো ইট তুলে খোয়া করার কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কী করা যায়, তা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।