ছেলেকে কিডনি দিতে চান মা, বাধা শুধু চিকিৎসা খরচ
রিফাত হাসান (২১) কৈশোরে বাবাকে হারিয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পর অভাবের পরিবারে মা সংসারের হাল ধরেন। উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দারিদ্র্যকে পরাজিত করার স্বপ্ন নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু বিধি বাম। সহপাঠীরা যখন ক্লাসে ব্যস্ত, তখন রিফাত মৃত্যুর ক্ষণ গুনছেন। তাঁর দুটি কিডনিই নষ্ট।
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামে রিফাতদের বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগে। রিফাত এখন সেই কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
আত্মীয়স্বজন, রিফাতের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই টাকা তাঁর চিকিৎসার জন্য খুবই নগণ্য।
পরিবার সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মার্চের দিকে জ্বর, বমি আর মাথাব্যথা দেখা দেয় রিফাতের। পরীক্ষা করে জানা যায়, রিফাতের দুটি কিডনির কোনোটিই আর কাজ করছে না। তাঁর এ অবস্থায় দিশাহারা মা সহায়-সম্বল বিক্রি করে রিফাতের চিকিৎসা করাতে শুরু করেন। দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহীতে চিকিৎসা শেষে ঢাকা সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি হন রিফাত। সেখানের চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম রিফাতকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এখন তাঁকে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। ডায়ালাইসিস না করালে শুরু হয় তাঁর শ্বাসকষ্ট।
রিফাতের মা রিতা বেগম আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসক যত দ্রুত সম্ভব ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে ২৫ থেকে ২৮ লাখ টাকা খরচ হবে। যা তাঁর পরিবারের পক্ষে জোগান দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আত্মীয়স্বজন, রিফাতের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই টাকা তাঁর চিকিৎসার জন্য খুবই নগণ্য। এ পরিস্থিতিতে ছেলেকে বাঁচাতে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা আশা করছেন তিনি। রিতা বেগম আরও বলেন, ‘আপনারা পাশে দাঁড়ালে, ছেলেকে আমি আমার কিডনি দেব।’