সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আগেই প্রচার শুরু করেছেন। সভা, কুশল বিনিময় ও জুমার নামাজে অংশ নিয়ে তাঁরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। কোনো কোনো প্রার্থী প্রকাশ্যে মতবিনিময় সভা করছেন। এসব অনুষ্ঠানে তাঁরা দিচ্ছেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৩ মে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১ জুন। এরপর শুরু হবে প্রচারণা, যা চলবে ভোট গ্রহণের এক দিন আগপর্যন্ত।
প্রচারণায় সবচেয়ে সরব আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। তবে গত দুটি নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত বর্তমান সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন বলে নগরে গুঞ্জন রয়েছে। তাঁকেও প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় কুশল বিনিময় করতে দেখা যাচ্ছে।
সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাহমুদুল হাসান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আবদুল্লাহ নগরের ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে চাওয়া অন্তত ৪০০ জন আগাম প্রচারণায় নেমেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটায় সিলেট নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ তৌফিকুল হাদীর উদ্যোগে দরগামহল্লা এলাকায় নির্বাচনী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জানিয়ে সভায় তৌফিকুল এলাকাবাসীর কাছে ভোট চান। তিনি নির্বাচিত হলে অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। একইভাবে সম্ভাব্য অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরাও পাড়া-মহল্লায় নির্বাচনী মতবিনিময় সভা করেছেন বলে স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন।
টানা কয়েক দিন নগরের ৪২টি ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ কর্মিসভা, মতবিনিময় সভার নামে এলাকায় ভোট চাইছেন। প্রতিদিন কোনো না কোনো পাড়া-মহল্লা কিংবা ওয়ার্ডে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর্মসূচি থাকছে। নগরের প্রতিটি এলাকায় রঙিন পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও ব্যানার সাঁটানো হয়েছে এসব প্রার্থীর। এরই মধ্যে যাঁরা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁদের অনেকের সমর্থনে প্রতীকসহ পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।
একাধিক ভোটার জানিয়েছেন, সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তাঁদের পক্ষে ভোট চাইছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। মসজিদে নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের কাছেও দোয়ার পাশাপাশি চাইছেন ভোট। শুক্রবারও বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় শেষে ভোট চাইতে দেখা গেছে তাঁদের। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, পোস্টারসহ যাবতীয় প্রচারসামগ্রী অপসারণের জন্য নগরে মাইকিংয়ের পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। এতেও কাজ হয়নি। প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে না। যাঁরা আচরণবিধি মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল শনিবার বেলা ১১টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে চারটি পৃথক দল সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় নগরে অভিযানে বের হবে জানিয়ে ফয়সল কাদের বলেন, এসব দল সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার, বিলবোর্ড অপসারণ করবে।
শুক্রবার নবগঠিত ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের বড়গুল জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরে তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় মেয়র ২০ মে তাঁর উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠের জনসভায় যোগ দেওয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার আবদুল বারী জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এ সময় তিনি মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও নৌকা প্রতীকে ভোট চান। পরে বিকেল চারটায় তাঁর সমর্থনে সিটি নির্বাচনে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে আয়োজিত সভায় যোগ দেন তিনি।
নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। সভায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলে ধরতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে জয় আসবে।
একইভাবে অন্য মেয়র প্রার্থীরাও শুক্রবার নানা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম নগরের সাগরদিঘিরপাড় এলাকার মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এরপর তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ভোট চান। পরে সন্ধ্যায় শিববাড়ি বাজার ও রাতে উপশহর তেরোরতন এলাকায় মতবিনিময় করেন নুরুল ইসলাম।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের সমর্থনে শুক্রবার বিকেলে নগরের হুমায়ূন রশীদ চত্বর এলাকায় সংগঠনের কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর শাখার কর্মিসভা হয়েছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, শুক্রবার পর্যন্ত মেয়র পদে ৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪০ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।