শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে কর্মবিরতিতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ফটকেছবি: প্রথম আলো

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। আজ সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় তিনটিতে শিক্ষক সমিতির ডাকে কর্মসূচি শুরু হয়। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরুর প্রথম দিনে সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে পড়ে। কর্মসূচির কারণে আজ ছয়টি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আজ আরবি, পরিসংখ্যান, পালি, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ, সংস্কৃত এবং জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা ছিল। কর্মবিরতির কারণে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, সেটিও এখন পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমির মোহাম্মদ মুছা প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা পুরোপুরি বন্ধ। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ‘প্রত্যয়’ বাতিলের ইতিবাচক সাড়া পেলে শিক্ষার্থীদের এ ক্ষতি তাঁরা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে বসে বিশেষ ব্যবস্থায় অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে সকাল থেকে শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরাও। কর্মচারীদের এই কর্মসূচি আগামীকাল মঙ্গলবার ও পরদিন বুধবারও পালন করা হবে।

চুয়েট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জামাল উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে তাঁরা তিন দিনের অর্ধদিবস কর্মসূচি শুরু করেছেন। দাবি আদায় না হলে ৭ জুলাই থেকে তাঁরাও সর্বাত্মক কর্মবিরতির কর্মসূচি শুরু করবেন। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, হলের ডাইনিং, বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহ সব বন্ধ করে দেওয়া হবে।

অর্ধদিবস কর্মবিরতি শুরুর প্রথম দিন দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ১ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে শতাধিক কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন বলেও জানান বাংলাদেশ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মো. জামাল উদ্দীন।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন শতাধিক শিক্ষক। এ সময় তাঁরা দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। একই দাবিতে পৃথকভাবে কর্মবিরতি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক বিপ্লব মল্লিক, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আনিসুজ্জামান, সহসভাপতি কাওসার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম, সাহানা রহমান; অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পৃথক কর্মসূচিতে ক্লাস-পরীক্ষা ছাড়াও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গবেষণাগারের কার্যক্রমও বন্ধ।

গত বছর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে বলা হয়, ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যাঁরা নতুন যোগ দেবেন, তাঁরা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন-সুবিধা পাবেন না। তার পরিবর্তে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে।

চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিম রয়েছে। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে ‘প্রত্যয়’ স্ক্রিম। এ ঘোষণার পর থেকে প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবি করে আসছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী; প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়)