খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চলছে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার কাজ। গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৩১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ১৮৮ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১০৫ জন। আজ মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে আছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী। এর বাইরে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া ‘হাইব্রিড’ নেতারাও মাঠে সক্রিয়। তবে যেসব ওয়ার্ডে বিএনপির নেতা–কর্মীদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেখানে এককাট্টা হওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৮ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ মে। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২৬ মে। আগামী ১২ জুন ইভিএমে ভোট হবে।
কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসন্ন সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলগতভাবে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরপরও খুলনায় বিএনপির পদধারী বর্তমান কয়েক কাউন্সিলর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে বেশির ভাগ ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় সেখানে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা প্রথম আলোকে বলেন, দল থেকে কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাপারটি উন্মুক্ত থাকবে। দলের যে কেউ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে পারবেন। তবে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বলছেন, যেসব ওয়ার্ডে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের সম্ভাবনা আছে, সেখানে একক প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের ১৩, ১৫, ১৯, ২৪, ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগে একক প্রার্থী আছে। এর মধ্যে ১৩ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর এস এম খুরশিদ আহম্মেদ, ১৫ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর মো. আমিনুল ইসলাম, ১৯ নম্বরে মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, ২৪ নম্বরে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ, ২৫ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর মো. আলী আকবর, ২৬ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর মো. গোলাম মাওলা এবং ২৭ নম্বরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম রফিউদ্দিন আহমেদ নির্বাচন করবেন। তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ১৯ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেতা আশফাকুর রহমান ও ২৪ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর বিএনপি নেতা মো. শমশের আলী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
নেতা-কর্মীরা বলেন, ওই সাতটি ওয়ার্ডের বাইরে ১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শেখ আবদুর রাজ্জাকের পাশাপাশি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাদাত মিনা ও দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের নেতা মো. মনিরুজ্জামান খান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ২ নম্বরে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া বর্তমান কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক এস এম মনিরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি শাকিল আহমেদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এফ এম জাহিদ হাসান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ৩ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর মো. আবদুস সালাম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আছিফুর রশীদ ও সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ হাসান, ৪ নম্বরে সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানী ও যুবলীগ নেতা মো. জামিরুল ইসলাম, ৫ নম্বরে দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মোহাম্মদ আলী ও থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হারুনুর রশিদ, ৬ নম্বরে বিএনপি থেকে যোগ দেওয়া বর্তমান কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. মিজানুর রহমান তরফদার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
৭ নম্বরে বিএনপি থেকে যুবলীগে যোগ দেওয়া সুলতান মাহমুদের পাশাপাশি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা শেখ খালিদ আহম্মেদ নির্বাচন করতে চান। ৮ নম্বরে বিএনপি থেকে যোগ দেওয়া বর্তমান কাউন্সিলর এইচ এম ডালিম ও যুবলীগ নেতা মো. সাহিদুর রহমান, ৯ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর এমডি মাহ্ফুজুর রহমানসহ সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাজী তাসকিন আহমেদ, ১০ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা কাজী তালাত হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. শরীফুল ইসলাম, ১১ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর মুন্সী আবদুল ওয়াদুদ, আওয়ামী লীগ নেতা মো. জামান মোল্লা ও যুবলীগ নেতা কাজী নেয়ামুল হক, ১২ নম্বরে বিএনপি থেকে যোগ দেওয়া মো. মনিরুজ্জামান ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা চৌধুরী মিরাজুর রহমান, ১৪ নম্বরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মফিজুর রহমান ও যুবলীগ নেতা ইয়াসিন আরাফাত নির্বাচন করতে চান।
১৬ নম্বরে বিএনপি থেকে যোগদান করা মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাস ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হাসান ইফতেখার, ১৭ নম্বরে বিএনপি থেকে যোগ দেওয়া শেখ হাফিজুর রহমান ও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ আলী খান এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে থানা আওয়ামী লীগের নেতা এস এম রাজুল হাসান, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা মো. পারভেজ আহম্মেদ ও মো. জাকির হোসেন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
২০ নম্বরে বিএনপি থেকে যোগ দেওয়া শেখ মো. গাউসুল আযম, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মো. লিটন, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোক্তার হোসেন ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এম আসাদুজ্জামান নির্বাচন করতে চান। ২১ নম্বরে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা মো. শামসুজ্জামান মিয়া ও ওয়ার্ড যুবলীগের নেতা মো. মশিউর রহমান, ২২ নম্বরে বর্তমান কাউন্সিলর কাজী আবুল কালাম আজাদ ও সদর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. তাজুল ইসলাম, ২৩ নম্বরে বিএনপি থেকে যোগ দেওয়া ইমাম হাসান চৌধুরী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফয়েজুল ইসলাম নির্বাচন করতে চান।
এ ছাড়া ২৮ নম্বরে আওয়ামী লীগ নেতা আজমল আহমেদ ও জিয়াউল হাসান, ২৯ নম্বরে সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির মো. সাইফুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা মুন্সী নাহিদুজ্জামান, ৩০ নম্বরে মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম মোজাফফর রশিদী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শিহাব উদ্দিন, ৩১ নম্বরে আওয়ামী লীগ নেতা আরিফ হোসেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম ও সাবেক সভাপতি রফিকুল আলম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আলী আকবর বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন সাধারণত উন্মুক্তভাবে হওয়া উচিত। আমাদের দেশে সাধারণত তা হয়ে ওঠে না। কাউন্সিলর প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিলে দলীয় প্রার্থীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কারণ, এক দলের অনেক প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিতে পারেন অন্য দলের বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।’