‘মায়ের সঙ্গে নামাজ পড়া’ অবস্থায় নিখোঁজ শিশু, লাশ মিলল পাশের বাসার ওয়ার্ডরোবে
মা মাগরিবের নামাজ পড়ছিলেন। তিন বছর বয়সী শিশু সাহালও মাকে অনুসরণ করে নামাজ পড়ছিল। হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। নামাজ শেষে মা দেখেন, সাহাল নেই। পরে শিশুটির লাশ পাওয়া গেছে পাশের বাসার ওয়ার্ডরোবে।
আজ মঙ্গলবার ভোরে পৌর শহরের পঞ্চবটি এলাকার দিল মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তির বাড়ির এক ভাড়াটিয়ার বাসার ওয়ার্ডরোব থেকে সাহালের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন শিশুটির মুখে স্কচটেপ প্যাঁচানো ছিল। এ ঘটনায় বাসাটির ভাড়াটিয়া হাছান মিয়াকে (৩৮) আটক করে পুলিশ। সাহালের মা মোমেনা বেগমকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
সাহাল ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের কালিকাপ্রসাদ গ্রামের সানাউল্লাহ বাবুর ছেলে। সানাউল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে কাতারে প্রবাসজীবন যাপন করছেন। আটক হাছানের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায়।
সাহালের খালা রহিমা বেগম বলেন, গতকাল মাগরিবের নামাজের সময় ছেলের নামাজের দৃশ্য ভিডিও করে বাবাকে পাঠান সাহালের মা। এরপর নামাজ শেষে দেখেন, সাহাল নেই। নামাজের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যায়। রহিমার ধারণা, সাহালকে গলা টিপে হত্যা করেন হাছান। শিশুটির প্রতি আক্রোশের কারণ জানতে চাইলে রহিমা তেমন কিছু বলতে পারেননি। পরে বলেন, হয়তো কোনো কারণে মোমেনার প্রতি ক্ষোভ থাকতে পারে।
আজ দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, ভৈরব পৌর শহরের পঞ্চবটি এলাকায় একটি বেসরকারি স্কুলের পেছনে দিল মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তির বাড়ি। একতলাবিশিষ্ট বাড়িটিতে একাধিক কক্ষ রয়েছে। কক্ষগুলো পৃথক পরিবারের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। হাছান মিয়া সাত বছর ধরে ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন। প্রথমে স্ত্রী–সন্তানেরাও হাছানের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তিনি। একই বাড়িতে মোমেনা থাকেন পাঁচ বছর ধরে।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মোমেনা হাউমাউ করে কান্না করছিলেন। তখন তিনি প্রতিবেশীদের জানান, তাঁর সন্তানকে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে রাতে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পুলিশ রাতে ওই বাড়িতে এসে ঘুরে যায় এবং অনেকের সঙ্গে কথা বলে। পরে ভোর চারটার দিকে পুলিশ হাছানের বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারে বাসায় হাছান নেই। ঘর তালাবদ্ধ। তালা ভেঙে ফেলে পুলিশ। এরপর ঘরের ওয়ার্ডরোবের প্রথম ড্রয়ার ভাঙার পর দেখতে পায় জুতা রাখা। দ্বিতীয় ড্রয়ারে পাওয়া যায় সাহালের মৃতদেহ। ভোরে অভিযান চালিয়ে পঞ্চবটি এলাকা থেকে হাছানকে আটক করা হয়।
বাড়ির মালিক দিল মোহাম্মদের স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, গতকাল রাত ১১টার পর হাছানের কাছ থেকে তিনি ফোন পান। তাঁর মাধ্যমে জানতে পারেন সাহালের নিখোঁজ হওয়ার কথা। এ ঘটনায় হাছান তাঁর সঙ্গে অস্থিরতা দেখান।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হাছানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি শিশুটিকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। হাছান ও মোমেনাকে মুখোমুখি করেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী কারণে শিশুটির প্রতি আগ্রাসী হলেন, সেটিও জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কারণটি এখনই বলা যাচ্ছে না। শিশুটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।