২০০১ নির্বাচনের পর নারীর মৃত্যুতে পাল্টাপাল্টি মামলা, ‘আলোচিত’ আসামির মৃত্যু
হত্যা মামলায় চাঁদপুর জেলা কারাগারে বন্দী ব্রজলাল চন্দ্র পাটিকর (৬২) নামের এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় কারাগার থেকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর আজ রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
ব্রজলাল চন্দ্র পাটিকর কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০০১ সালের ৩১ অক্টোবর কচুয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ব্রজলালের দ্বিতীয় স্ত্রীর লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর ২০০৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্রজলাল চন্দ্রকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করে।
পরে ওই মামলাকে সাজানো দাবি করে ব্রজলালের ছেলে দিলীপ চন্দ্র বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন। দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা এই মামলায় আসামি হিসেবে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এহসানুল হক ওরফে মিলনসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার এজেন্ট থাকার কারণে ব্রজলালের স্ত্রী ওই সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী ও পরিবার।
চাঁদপুর জেলা কারাগারের জেলার মো. মনির হোসাইন বলেন, ব্রজলাল চন্দ্র কচুয়া থানায় স্ত্রী হত্যার অভিযোগে হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর কারাগারে আসেন। আজ সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের সময় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে তাৎক্ষণিক চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ওমর ফারুক বলেন, হার্ট অ্যাটাকে ব্রজলাল চন্দ্রের মৃত্যু হয়েছে। পরীক্ষা করে দেখেছেন, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিলতার কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন।
ব্রজলাল চন্দ্রের আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ব্রজলালের স্ত্রী ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নৌকা প্রতীকের এজেন্ট হিসেবে কচুয়া থানার সুবিদপুর কমিউনিটি সেন্টার ভোটকেন্দ্রের মহিলা বুথের দায়িত্ব পালন করেন। ওই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এহসানুল হকসহ তাঁর সমর্থকদের নিয়ে জাল ভোট দিতে গেলে তিনি প্রতিবাদ করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে ব্রজলালের স্ত্রীকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। ওই ঘটনার জের ধরে নির্বাচনে জয়ের পর তাঁর বাড়িতে এহসানুল হকের নেতৃত্বে সমর্থকেরা হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। ব্রজলালের স্ত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করে পরদিন কচুয়া বাসস্ট্যান্ডে লাশ ফেলে রাখে।
হেলাল উদ্দিন অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় এহসানুল হকের চাপে পুলিশ তাৎক্ষণিক মামলা না করে দুই বছর পর নামমাত্র মামলা করে। যেখানে দুঃখজনকভাবে ভুক্তভোগীর স্বামীকেই আসামি করা হয়। পরে ২০১০ সালে ব্রজলাল চন্দ্রের ছেলে বাদী হয়ে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন। যাতে এহসানুল হকসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৮–১০ জনকে আসামি করা হয়।
আইনজীবী হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রথম মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্রজলাল চন্দ্রের বিরুদ্ধে একতরফা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আইনের বিধান অনুযায়ী তাঁকে পরবর্তী মামলা থেকে বাদ দিতে পারেননি। ফলে কয়েক দিন আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ব্রজলাল চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
আজ দুপুরে হাসপাতালে ব্রজলালের লাশ নিতে আসেন তাঁর প্রথম স্ত্রী ঝর্ণা রানী দে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি–জামায়াতের লোকজন নির্মমভাবে নির্যাতন করে ব্রজলালের দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যা করে। তাঁরা এর সুষ্ঠু বিচার চান।
ব্রজলালের ভাগনে কৃষ্ণ পাটিকর বলেন, তাঁর মামি নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। একই মামলায় মামাকে আসামি করায় অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান। এর ঘটনার সঙ্গে প্রকৃত জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
চাঁদপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ আর এম জাহিদ হাসান বলেন, ব্রজলালের লাশের সুরতহালের সময় তেমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তারপরও ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।