কুমিল্লায় গণসমাবেশের প্রচারপত্র বিলি করেছেন বহিষ্কৃত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা
কুমিল্লায় ২৬ নভেম্বরের টাউন হল মাঠের বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করতে পথে পথে প্রচারপত্র বিলি করছেন দল থেকে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত তিন নেতা। তাঁরা হলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক (সাক্কু), কুমিল্লা মহানগর বিএনপির অব্যাহতিপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আমিরুজ্জামান ও কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন (কায়সার)। তাঁদের সঙ্গে প্রচারপত্র বিলির সময় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেখা যাচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ মে রাতে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আমিরুজ্জামানকে আহ্বায়ক ও কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লাকে (টিপু) সদস্যসচিব করা হয়। কমিটিতে মহানগর যুবদলের সভাপতি উত্বাতুল বারী ওরফে আবুকে ১৪ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই দিন রাত ১১টায় নগরের বাদুরতলা এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করে আমিরুজ্জামান বলেন, এ কমিটিতে তাঁর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে।
কমিটি ঘোষণার এক সপ্তাহ পর চলতি বছরের ৭ জুন দলীয় শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আমিরুজ্জামানকে সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমিরুজ্জামান জেলা ও মহানগর বিএনপির দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। বুধবার দুপুরে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় তিনি গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, সদস্য নেছার আহমেদ, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে আমিরুজ্জামান বলেন,‘ ছাত্রদল, যুবদল হয়ে বিএনপির রাজনীতি করছি। দল আমাকে অব্যাহতি দিলেও দলের কার্যক্রম ও কর্মসূচি থেকে সরে যাইনি। দলের সব কার্যক্রমে আছি। গণসমাবেশ সফল করতে কাজ করছি। দল আমাকে ফিরিয়ে আনবেই।’
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেওয়ায় গত ১৯ মে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হককে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলের নেতা-কর্মীদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বারণ করা হয়। ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মনিরুল হক আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কাছে ৩৪৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। কয়েক দিন ধরে মনিরুল হক গণসমাবেশ সফল করতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করে আসছেন। বুধবার দুপুরে কুমিল্লার আদালত প্রাঙ্গণে তাঁকে প্রচারপত্র বিলি করতে দেখা যায়। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মো. কাইমুল হক, সাধারণ সম্পাদক তারেক আবদুল্লাহ প্রমুখ।
মনিরুল হক বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমাদের পরিবার ও আমি জড়িত। কুমিল্লায় আদি বিএনপি আমরা। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। উনারা বলেছেন, কাজ করতে, তাই মাঠে আছি। গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণার আগে থেকেই দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। এখন ঘরে বসে থাকার সময় নয়, বিএনপিকে সংগঠিত করে এগিয়ে নেওয়াই আমার কাজ। দল আমাকে ফিরিয়ে নেবে, এই বিশ্বাস আমার আছে।’
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় ১৯ মে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা কুমিল্লায় আসেন। ওই সময়ে নিজামের অনুসারীরা তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে নগরের বাদুরতলা ও ধর্মসাগরপাড় এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন টানান। নিজাম দলের সব কর্মসূচিতে জড়িত আছেন। তিনি কালীরবাজার এলাকায় ২৬ নভেম্বরের গণসমাবেশ সফল করতে প্রচারপত্র বিলি করেছেন। বুধবার বেলা ১১টায় নগরের লাকসাম সড়কের পৌর মার্কেট এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করেন তিনি।
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, বিএনপির গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে প্রচারপত্র বিলি করছেন। কর্মীদের সঙ্গে সভা করছেন। দলের কাজই করে যাচ্ছেন।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা প্রচারপত্র বিলি করছেন। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ ও অব্যাহতিপত্র এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি।