কোম্পানীগঞ্জে আন্দোলনকারীদের মিছিলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ইটপাটকেল নিক্ষেপ

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে
ছবি : সংগৃহীত

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে কবির আহমদ নামের স্থানীয় এক সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বেলা সোয়া দুইটার দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে। পরে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুর ১২টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা মাথায় লাল কাপড় বেঁধে মিছিল নিয়ে টুকেরবাজার থেকে থানার বাজারের দিকে যেতে থাকেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলটি উপজেলা পরিষদের ফটকের সামনে পৌঁছায়। এ সময় সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছিলেন। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওমর আলী, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম স্বাধীন ও যুবলীগ নেতা আজিম আহমদ, রাসেল আহমদ, আবদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়েই স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই এলাকা দিয়ে থানার বাজারের দিকে যেতে থাকলে উপজেলা পরিষদের ফটকের সামনে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

একপর্যায়ে বেলা একটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশ উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটক থেকে সরে যায়। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপজেলা পরিষদের ফটকের সামনে অবস্থান করে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান বেলা ১টা ৫০ মিনিটে বলেন, পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছে।

সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। বেলা দুইটার দিকে
ছবি: প্রথম আলো

স্লোগানে মুখর চৌহাট্টা এলাকা

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। বেলা সোয়া দুইটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্তত দেড় হাজার শিক্ষার্থী কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান দিচ্ছেন।

এদিকে দুপুর ১২টার পর থেকে সিলেট নগরের শাহী ঈদগাহ, সুবিদবাজার, পাঠানটুলা, মদিনামার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে ‘মহড়া’ দিতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা একটার পর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে চৌহাট্টা এলাকায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় একাত্মতা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের বাইরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরাও যোগ দিতে কর্মসূচিতে আসছেন।

এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, কর্মসূচি ঠেকাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন। যেসব সড়ক ধরে শিক্ষার্থীরা চৌহাট্টা এলাকায় গিয়ে সমবেত হবেন, মূলত সেসব সড়কে আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছে ছাত্রলীগ। তবে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধা দিলে এর পরিমাণ ভালো হবে না।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মদিনামার্কেট এলাকায় ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। ছাত্রলীগ কোথাও মহড়া দিচ্ছে না। দুইটার দিকে ছাত্রলীগের কর্মসূচিও শেষ হয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষে সবাই বাসায় ফিরে গেছেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বেলা সোয়া দুইটার দিকে বলেন, শিক্ষার্থীরা চৌহাট্টা এলাকায় জড়ো হয়ে কর্মসূচি শুরু করেছেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করেছে। কোথাও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি। তবে সার্বিক পরিস্থিতির নজরদারি রাখতে চৌহাট্টা এলাকার আশপাশে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন আছে।