নগরেই বেজক্যাম্পে, রুদ্ধশ্বাস আয়োজনে যা যা আছে
পাহাড়ের সবুজের সঙ্গে মিল খাওয়া ‘সামরিক’ পোশাক পরে প্রস্তুত দুই দল। সবার মাথায় বড় হেলমেট ও হাতে অস্ত্র। সময় শুরু হতেই শুরু হলো যুদ্ধ। তবে আসল বুলেট নয়, এসব অস্ত্র থেকে বের হলো রঙের বুলেট। যুদ্ধের আদলে সাজানো প্রতিযোগিতামূলক খেলাটির নাম ‘পেইন্ট বল গেম’। চট্টগ্রাম শহরের পাহাড়তলীর ফয়’স লেকের ‘বেজক্যাম্পে’ নতুন সংযোজন এই খেলা।
গত বছর কনকর্ড গ্রুপ অব কোম্পানি ও বেজক্যাম্প অ্যাডভেঞ্চারস লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে চালু হয় বেজক্যাম্প। এতে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধির নানা কার্যক্রম, কয়েকটি গাছকে কেন্দ্র করে দলগত কার্যক্রম ‘ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি’, রোমাঞ্চপ্রিয়দের জন্য পাঁচটি বাধা পেরোনোর ‘অন গ্রাউন্ড অ্যাকটিভিটি’ এবং নেতৃত্ব বিকাশের জন্য ‘টিম বিল্ডিং গেম’। এর সর্বশেষ সংযোজন পেইন্ট বল।
বেজক্যাম্পের একদম উঁচু পাহাড়ে পেইন্ট বল খেলার স্থান। ১০ জন দুই দলে ভাগ হয়ে খেলতে হয় এই খেলা। ১০ জনের একটি দলের জন্য খরচ হবে তিন হাজার টাকা। তবে পুরো দিনের প্যাকেজ নিলে সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকে এটি। পুরো দিনের প্যাকেজে সব অ্যাকটিভিটিসহ জনপ্রতি খরচ হবে তিন হাজার টাকা। সঙ্গে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে।
বেজক্যাম্পে অন্যান্য অ্যাকটিভিটির মধ্যে আছে লেকের জলে কায়াকিংয়ের সুযোগ। তীর-ধনুকের তালিম নিতে আর্চারি। দৈত্যাকার দোলনা ও হ্যামকে দোল খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। এ ছাড়া রাতে ক্যাম্পিং করে থাকলে অন্ধকারে পুরো পাহাড় ঘুরে দেখার সুযোগ।
দিনভর পাহাড়ে
বৃক্ষরাজিতে ঘেরা চারপাশ। তার মধ্যে পাহাড়ের বুকে শান্ত নীল জলের লেক। সেই লেকে নৌকা নিয়ে ঘুরতে ঘুরতেই পেয়ে যেতে পারেন বুনো হরিণ কিংবা খরগোশের দেখা। ফয়’স লেকের এমন পরিবেশ পেরিয়ে বেজক্যাম্পে প্রবেশপথ। সেটির পাশেই অভ্যর্থনা কক্ষ এবং রেস্তোরাঁ। এরপর দুটি পথ। একটি পথ সোজা গিয়ে নিয়ে যাবে ‘ক্যাম্পিং হিল’-এ। আর ডান দিকের পথ ধরে উঠলেই ‘অ্যাকটিভিটি হিল’।
অ্যাকটিভিটি হিলে উল্লেখযোগ্য ট্রি টপ অ্যাকটিভিটি ও অন গ্রাউন্ড অ্যাকটিভিটি। যা শারীরিক ও মানসিক দক্ষতার পরীক্ষা নেবে দর্শনার্থীদের। এরপর রয়েছে দৈত্যাকার দোলনা। প্রায় ১০ ফুট উঁচু থেকে দোল খেতে খেতে উপভোগ করা যায় পাহাড়ের চূড়া থেকে চট্টগ্রাম শহরের নয়নাভিরাম দৃশ্য। এবার একটু পেছনে এলেই ‘জিপ লাইন’। লেকের ওপর লম্বা এই জিপ লাইনে ঝুলে উপভোগ করা যাবে লেকের সৌন্দর্য।
এরপর চলে যেতে পারেন পেইন্ট বলের স্থানে। দলবল নিয়ে সেখানে সময় কাটানোর পর এবার ক্লান্ত হয়ে রেস্তোরাঁয় দুপুরে খাওয়া শেষে চলে আসতে পারেন ক্যাম্পিং সাইটে। সেখানে জায়ান্ট হ্যামকে শুয়ে কাটানো যাবে সুন্দর একটি বিকেল। এ ছাড়া কায়াক চালিয়ে লেকের মধ্যেও সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে। দিনের প্যাকেজ শেষ হবে। তবে রাতে রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চাইলে থাকতে হবে তাঁবুতে।
পাহাড়ি পথে রাত
বেজক্যাম্পে আসল সৌন্দর্য রাতে। ঝিঁঝি পোকার ডাক আর শিয়ালের হাঁক মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক রোমাঞ্চকর আবহ। সন্ধ্যার পর লেকের পাড়ে জ্বলে ওঠে ক্যাম্পফায়ার। সেখানে দলবেঁধে চলে গানের আসর, মুগ্ধতায় ভরা রাত। আপনি চাইলে পুরো রাত লেকের পাড়ে কাটিয়ে দিতে পারেন কিংবা তাঁবুতে ফিরে বিশ্রাম নিতে পারেন।
যদি চাঁদের আলোয় হালকা ট্র্যাকিংয়ের শখ থাকে, তবে পাড়ি জমাতে পারেন ‘ইনটু দ্য ওয়াইল্ড’ পাহাড়ে। প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা পথটি জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেছে। চাঁদের মিষ্টি আলোয় ঘেরা এই পথে হাঁটলে দিনের সব ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে যাবে। দেখা যাবে শজারু, সাপ ও নানা প্রজাতির প্রাণী।
পর্যটকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিটি রোমাঞ্চকর কার্যক্রমে দক্ষ প্রশিক্ষকেরা সঙ্গে থাকেন। বেজক্যাম্প সাইটের ব্যবস্থাপক নাজমুল ওয়াহিদ জানান, এখানে পর্যটকদের জন্য দুই স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে চট্টগ্রামে এসে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা গাড়িতে করে চলে যেতে পারেন ফয়’স লেকে। এখানে বেজক্যাম্পে কর্মকাণ্ডগুলো আলাদা আলাদাভাবেও করা যায়, তবে দিনব্যাপী কর্মকাণ্ড ও রাত্রিবাসের প্যাকেজ বেশি জনপ্রিয়। রাত্রিবাসের প্যাকেজে খরচ হবে জনপ্রতি সাত হাজার টাকা। এর মধ্যে পরদিন সকালের খাবারসহ সব ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত।