মধ্যরাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যুর পর স্বজনদের আহাজারি। আজ সকালে উপজেলার সীমের খাল গ্রামেছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে আগুন লেগে একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সীমের খাল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ছয়জনের লাশ উদ্ধার করে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন এমারুল মিয়া (৪৫), তাঁর স্ত্রী পলি আক্তার (৩৫), এ দম্পতির ছেলে পলাশ মিয়া (১০), ফরহাদ মিয়া (৮), ওমর ফারুক (৩) এবং মেয়ে ফাতেমা আক্তার (৫)।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল রাত ১২টার দিকে সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে কীভাবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, তা কেউ জানাতে পারেননি।

উপজেলা প্রশাসন, থানা–পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সীমের খাল গ্রামে সরকারি অর্থায়নে ২০২১ সালে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ৩৪টি টিনের ছাউনিসহ আধাপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। এখানে ৩৪টি পরিবারের বসবাস। গতকাল রাত ১২টার দিকে হাওরে মাছ শিকার করে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে সীমের খাল গ্রামের বাসিন্দা জেলে সাইফুল ইসলাম (৫০) আশ্রয়ণ প্রকল্পে এমারুল মিয়ার বসতঘরের ভেতরে আগুন দেখতে পান। সাইফুলের চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসেন। তাঁরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তখন এমারুল মিয়ার বসতঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। রাত দুইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে আজ সকালে ধর্মপাশার ইউএনও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন, ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আলী ফরিদ আহমেদ, ধর্মপাশা থানার ওসি এনামুল হক আজ সোমবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ সম্পর্কে ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনামুল হক বলেন, ‘সোমবার রাত দুইটার পর খবরটি জানতে পেরেছি। আমরা আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সীমের খাল গ্রামে গিয়ে একই পরিবারের ছয়জনের অগ্নিদগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছি। লাশ চেনার উপায় নেই। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য লাশ সুনামগঞ্জ জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।’  

ওসি এনামুল হক আরও বলেন, কী কারণে এবং কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চলছে।

সীমের খাল গ্রামের বাসিন্দা নিহত পলি আক্তারের ছোট ভাই মনির মিয়া (২০) বলেন, ‘আমার বইন ও ভগ্নিপতির মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাঁটি ছিল না। রাতে বেলায় তাঁদের বাড়িতে আমি দাওয়াতও খাইছি। কী কারণে তারা আগুনে পুড়ে মরল বুঝতে পারছি না।’

ধর্মপাশার ইউএনও মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন প্রথম আলোকে  বলেন, ‘অগ্নিদগ্ধ হয়ে  একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যুর খবরটি খুবই বেদনাদায়ক। ঘটনাস্থল ঘুরে এসেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ দাফনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তা দেওয়া হবে।’