টানাপোড়েনের সংসারে গতি ফেরাতে বছরখানেক আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেন আজিজুল মোল্লা (২৫। শ্রমিকের কাজ নেন রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি কারখানায়। তাঁর আয়েই চলত বয়স্ক মা-বাবার জীবন-জীবিকা। আজিজুলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন তাঁর মা–বাবা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁদের সেই স্বপ্ন নিমেষেই শেষ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর শহরে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে আজিজুল নিহত হন। তাঁর বাড়ি ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নে। তিনি ওই ইউনিয়নের বাতাগ্রামের মো. কালাম মোল্লার ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে আজিজুল সবার ছোট।
নিহত আজিজুল মোল্লার পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজিজুলের বড় তিন ভাই বিয়ে করে প্রত্যেকে আলাদা সংসার করছে। আজিজুল তাঁর বয়স্ক মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে থাকতেন। এক বছর আগে জীবিকার জন্য মালয়েশিয়ায় যান তিনি। বিদেশে যাওয়ার পর তাঁর টাকাই চলত মা-বাবার ছোট সংসার। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় সংসারের সবচেয়ে কর্মঠ ছেলেকে হারিয়ে বাক্রুদ্ধ মা–বাবা।
কুয়ালালামপুরের একটি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন আজিজুল। তাঁর মা কামেলা বেগম বলেন, গতকাল বেলা তিনটার দিকে ছেলের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়। দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কাজে যাওয়ার পথে তাঁকে ফোন দিয়েছিলেন আজিজুল। যাওয়ার পথে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
আজিজুলের বাবা কালাম মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় থাকা আমার ছোট ছেলেটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। সে আমাদের কামাই করে খাওয়াত। ভেবেছিলাম দুই-তিন বছর পর ওকে দেশে এনে বিয়ে দিয়ে দেব। তার আগেই এভাবে চলে গেল। কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছি না।’
এদিকে মালয়েশিয়ায় থেকে আজিজুলের লাশ দেশে ফেরত আনা নিয়ে চিন্তিত তাঁর স্বজনেরা। তাঁরা কীভাবে কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেছেন আজিজুলের স্বজনেরা।
মাঝারদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আফছার উদ্দীন বলেন, আজিজুল মালয়েশিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ওই দেশে থাকা তাঁদের এলাকার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কীভাবে তাঁর লাশ দেশে আনা হবে, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।