কেশবপুরের ১০৪টি গ্রাম তিন মাস ধরে জলাবদ্ধ
হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে কেশবপুরের ১০৪টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
যশোরের কেশবপুরের ১০৪টি গ্রাম তিন মাস ধরে জলাবদ্ধ। বাড়ির আশপাশে এমনকি ঘরের মধ্যে পানি। পানির কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। দূষিত পানিতে কয়েক শ গাছ মারা গেছে। পচা পানির মধ্য দিয়ে চলাচল করায় লোকজন চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় লোকজন সরকারের কাছে দ্রুত জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কেশবপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১০৪ গ্রামে জমে আছে। এতে এসব গ্রামের ৯ হাজার ৮৩০টি পরিবারের ৩৯ হাজার ৩২০ সদস্য এখন পানিবন্দী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিহর নদ ও বুড়িভদ্রা নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এতে গত সেপ্টেম্বের মাঝামাঝি সময় থেকে কেশবপুর পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌর শহরের সাহাপাড়া, সবজির কাঁচাবাজার, পাইকারি বাজার, মাছবাজার ধান হাটা, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এলাকায় পানি। এ ছাড়া কেশবপুর-পাঁজিয়া সড়ক পানিতে তলিয়ে আছে। পৌরসভার সাহাপাড়া, মধ্যকুল, হাবাসপোল, আলতাপোল এলাকার প্রতিটি বাড়িতে পানি উঠে গেছে। মধ্যকুল ও হাবাসপোল এলাকার মানুষ বাড়ি ছেড়ে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের দুই পাশে শতাাধিক পরিবার খুপরি তুলে আশ্রয় নিয়েছেন।
সম্প্রতি কেশবপুর শহরের মধ্যকুল, হাবাসপোল, আলতাপোল গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধ পানি পচে কালো হয়ে গেছে। পচা পানিতে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পচা পানিতে পরিবেশদূষণ বেড়ে গেছে। কবে পানি নামবে, তা বলতে পারছে না কেউই।
মধ্যকুল শেখপাড়ার বাসিন্দা জবেদা খাতুন বলেন, ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি। পানি পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পানিতে নামলেই চুলকাচ্ছে। গায়ে খোসপাঁচড়া হচ্ছে।
মধ্যকুল সরদার পাড়ার গৃহবধূ তসলিমা বেগম বলেন, ‘ঘরের মধ্যে পানি থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যশোর-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে খুপরি ঘরে এসে উঠেছি। এই সড়কে আশ্রয় নেওয়া হিরা বেগম নামের অপর এক গৃহবধূ বলেন, ‘আমরা সাহায্য চাই না। আমরা জলাবদ্ধতা দূর করার দাবি জানাচ্ছি।’
কেশবপুর পৌরসভার মধ্যকুল এলাকার হজরত আলী বলেন, দিনের পর দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। পানি পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। ঘরে–বাইরে কোনো জায়গায় স্বস্তি নেই।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যনার্জি বলেন, কেশবপুরের জলাবদ্ধতা দূর করতে দুটি খননযন্ত্র দিয়ে পলি অপসারণের কাজ চলছে।