রাজশাহীতে টিসিবির দীর্ঘ সারি, তেল না পেয়ে হতাশ

রাজশাহীতে টিসিবির পণ্যের সারিতে ভিড় বাড়ছে। তবে সয়াবিন তেল না পেয়ে হতাশ গ্রাহকেরা। মঙ্গলবার সকালে জেলার চারঘাট উপজেলার মুংলি গ্রামেছবি: প্রথম আলো

ঘন কুয়াশার মধ্যে শীতের সকালে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য কিনতে পরিবেশকের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছেন কয়েকজন। ঘড়ির কাঁটায় ঘণ্টা পেরোতেই সারি অনেক দূর চলে গেছে। সারি দীর্ঘ হওয়ায় সব ধরনের পণ্য না পাওয়ার ক্ষোভ আছে কারও কারও মনে। যাঁরা শুধু চাল আর ডাল পেয়েছেন, তাঁদের মুখে একই কথা ‘তেল মাইরি দিচে’। রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মুংলি গ্রামে আজ মঙ্গলবার সকালে টিসিবির পণ্য বিক্রির এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

টিসিবির রাজশাহীর আঞ্চলিক কার্যালয় জানাচ্ছে, নভেম্বর থেকে টিসিবির কাছে সয়াবিন তেল নেই। বাজারে ১৭০ টাকা লিটার খোলা তেল পাওয়া যাচ্ছে। পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। অথচ টিসিবির তেলের দাম ১০০ টাকা। তেলের সঙ্গে অন্য সব পণ্যের দাম এখন বাড়তি। এ জন্য ক্রেতারা টিসিবির পণ্যের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।

আজ চারঘাটের মুংলি গ্রামের মিন্টুর মোড়ে চারঘাট ইউনিয়নের টিসিবির পণ্য বিতরণ হচ্ছিল। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা সারি। সকাল আটটা থেকে সারা ইউনিয়নের কার্ডধারী উপকারভোগী ব্যক্তিরা এ কেন্দ্রে টিসিবির পণ্য নিতে এসেছেন। প্রতি কেজি ডাল ৬০ ও প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি লিটার সয়াবিন ১০০ টাকা করে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু বাজারে তেলের সংকট।

সকাল আটটা থেকে সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন অনুপমপুর গ্রামের আবদুল মতিন। তিনি বললেন, ‘একুন শুধু চাল আর ডাল দিচ্ছে। ত্যাল নাকি মাইরি দিচে নাকি শট পড়িচে তাই বুলছে।’ সারিতে এত ভিড় কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। টিসিবির মালের দাম এটটু কম। তাই গরিব মানুষ কাম ফেলি লাইনে আইসি দাঁড়াইচে।’

তালবাড়িয়া গ্রামের আবদুর রহমানও একই কথা বললেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেলের কাছে ভিড়ার জো নাই। টিসিবির ত্যাল ১০০ ট্যাকা লিটার পাওয়া যায়। একুন আইসি দেখছি খালি চাল আর ডাল। ত্যাল নাই।’ একই গ্রামের আবদুল মালেক বলেন, ‘ত্যালের লাইগি সকাল থাইকি দাঁড়া আছিল, একুন নাকি ত্যালই নাই। ত্যাল মারি দিচে।’

দুপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাজশাহী নগরের সাহেববাজারের বড় বড় দোকানগুলোয় এখনো বোতলজাত সয়াবিন তেল নেই বলে দোকানিরা জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, খোলা সয়াবিন ভালোটা তাঁদের কাছে আছে। প্রতি লিটার তাঁরা ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর পাম তেল সুপার আছে। প্রতি লিটার ১৬০ টাকা। আগামী শনিবারের আগে বোতলজাত তেল পাওয়া যাবে না।

জানতে চাইলে টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, নভেম্বর থেকে তাঁরা সয়াবিন তেল দিতে পারছেন না। তাঁদের কাছে নেই। এখন পর্যন্ত তাঁদের তেলের কেজি ১০০ টাকা নির্ধারিত আছে। তিনি বলেন, গত পরশু সয়াবিন তেলের যে বাজারমূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রতি লিটার তেল বাজারে বিক্রি হবে ১৭৫ টাকা। আর টিসিবির তেলের দাম বাঁধা ১০০ টাকা। নতুন মূল্য নির্ধারণ না করা পর্যন্ত টিসিবির তেল ১০০ টাকা লিটারে বিক্রি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে হয়তো তাঁরা ডিলারদের টিসিবির তেল সরবরাহ করতে পারবেন।