ফুলের ঝাড়ুর কারখানা দিয়ে স্বাবলম্বী আবু তাহের

নীলফামারী জেলা সদরে ফুলঝাড়ু তৈরির কারখানায় কাজে ব্যস্ত শ্রমিকেরা। গতকাল পঞ্চপুকুর এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

আপন মনে ফুলের ঝাড়ু তৈরি করছেন শ্রমিকেরা। নিপুণ হাতে প্রথমে ফুলগুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন। এরপর প্রয়োজন ও ধরন অনুযায়ী টেপ দিয়ে মুড়িয়ে কিংবা পাইপে প্রবেশ করিয়ে তৈরি করছেন একেকটি ঝাড়ু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের ঝাড়ুর চাহিদা বেড়েছে। ফলে বাজার ধরতে সমস্যা হচ্ছে না উদ্যোক্তা আবু তাহেরের। তাঁর মতে, এ কাজ করে তিনিসহ তাঁর কারখানায় কাজ করা শ্রমিকেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন, খুলেছে সবার ভাগ্য।

আবু তাহেরের ফুলঝাড়ু তৈরির কারখানাটির দেখা মিলবে নীলফামারী জেলা সদরের পঞ্চপুকুর বাজারে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত তানিয়া ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত হচ্ছে ফুলঝাড়ু। পণ্যটি জেলাটির অনেক বাজারেই পাওয়া যাচ্ছে। আপাতত স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা মেটাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির ফুলঝাড়ু। মাসে প্রায় ৬ লাখ টাকার ফুলঝাড়ু বিক্রি করেন তিনি।

এমন উদ্যোগের শুরুটা হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। স্বল্প পুঁজি আর ছোট পরিসরে কাজ শুরু করেছিলেন আবু তাহের। ওই সময় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে তিনি নিজেও তৈরি করেছেন এসব ফুলঝাড়ু। বর্তমানে তাঁর কারখানার পরিসর বেড়েছে। বাজারে চাহিদা মেটাতে বাড়ানো হয়েছে শ্রমিকের সংখ্যাও। বর্তমানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন তাঁর কারখানায়।

কারখানার শ্রমিকদের একজন জাহিদুল হাসান। এই তরুণের বাড়ি পাশের উত্তরপাড়া গ্রামে। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই ঝাড়ু তৈরি করছেন। দিনে অন্তত ১০০টি ঝাড়ু বানান তিনি। এতে প্রায় ৫০০ টাকার মতো আয় হয়। মালিক ক্রয়াদেশ বেশি পেলে সারা দিনে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এ কাজ করতে বেশ ভালোই লাগেই বলে জানান তিনি।

এমন উদ্যোগের পেছনের কারণ জানতে চাইলে আবু তাহের বলেন, বাড়িঘর পরিষ্কার ও ঝাড়ু দেওয়ার জন্য অপরিহার্য হচ্ছে ফুলঝাড়ু। ফুলের তৈরি ঝাড়ুর কদর দিন দিন বাড়ছে। রাজধানী ঢাকায় ফুলঝাড়ু তৈরির একটি কারখানায় বেশ কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতাও আছে তাঁর। তাই আর কিছু না ভেবে সেখান থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই কারখানাটি দিয়েছেন।

ফুলঝাড়ু তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে উলু ফুল। দেশের প্রায় সব এলাকাতেই পাওয়া গেলেও এগুলো চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করেন আবু তাহের। তাঁর মতে, সাধারণত শীতকালে এ ফুল ফুটে। মার্চ মাসে গাছে ফুল আসে। এরপর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ করে শুকানোর পর তা বিক্রি করা হয়।

আবু তাহের বলেন, শ্রমিকেরা শুধু হাতে হাতে ঝাড়ুগুলো বাঁধাই করে মজুরি নেন। একজন শ্রমিক কয়েক মিনিটেই একটি ঝাড়ু বাঁধাই করতে পারেন। একটি ফুলঝাড়ু তৈরি করে তাঁরা পান ৫ থেকে ৭ টাকা আর পাইকারি মূল্যে প্রতিটি ঝাড়ু ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। এরপর খুচরা পর্যায়ে একই ঝাড়ু ১০০ টাকায় বিক্রি করেন খুচরা দোকানিরা।

আবু তাহেরের এই কুটির শিল্পের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা বিসিকের উপব্যবস্থাপক মো. নূরেল হক। তিনি বলেন, ‘পঞ্চপুকুরের ফুলঝাড়ু তৈরির কথা শুনেছি। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্প্রসারণে বিসিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। ফুলঝাড়ু তৈরি কারখানার মালিক সহযোগিতা চাইলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’