সুন্দরবনের পূর্ব অংশে বাঘ গণনা শুরু, ২৯৫টি পয়েন্টে বসবে ক্যামেরা
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণে এবার বনের পূর্ব অংশে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে শুরু হয়েছে গণনাকাজ। আজ রোববার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের হারবাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এ বাঘশুমারি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’–এর আওতায় বনে বাঘ গণনার জন্য চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে ২৯৫টি গ্রিড বা পয়েন্টে ক্যামেরা বসানো হবে। এর আগে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে বাঘ গণনার ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শেষ করেছে বন বিভাগ।
শুমারি কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, বাঘের অস্তিত্ব টিকে থাকলে সুন্দরবনের অস্তিত্ব রক্ষা পাবে। যে দিন বাঘ থাকবে না, সেদিন সুন্দরবনের অস্তিত্ব বিপৎসংকুল হয়ে যাবে। বাঘের কারণে সুন্দরবন সারা পৃথিবীতে পরিচিত। এই শুমারি বাঘ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) নির্মল কুমার পাল, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের ডিএফও আবু নাসের মহসিন হোসেন, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ডিএফও কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা বিভাগের মৎস্যবিশেষজ্ঞ মো. মফিজুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনে গাছের সঙ্গে মাটি থেকে ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। ১৫ দিন পরপর ক্যামেরার ব্যাটারি ও মেমোরি কার্ড পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। ক্যামেরার সামনে দিয়ে কোনো বাঘ বা অন্য যেকোনো প্রাণী গেলে ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটির ছবি ও ১০ সেকেন্ডের ভিডিও ধারণ করে রাখবে।
প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, হারবাড়িয়া এলাকা থেকে পর্যায়ক্রমে বনের কোকিলমনি ও আলোরকোল পর্যন্ত ক্যামেরা বসানো হবে। এরপর কটকা ও কচিখালী থেকে শুরু করে শরণখোলার দিকে যাবে বাঘশুমারি দল। প্রতিটি পয়েন্টে ক্যামেরা থাকবে ৫০ দিন। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ চলবে। এরপর সাতক্ষীরার গোলখালী এলাকায় যেখানে লোকালয়ে প্রায়ই বাঘ চলে আসে, সে এলাকায় ক্যামেরা বসানো হবে।
ক্যামেরার মাধ্যমে বাঘের মুখমণ্ডল ও ডোরা কাটার ছাপ উঠে আসবে। প্রতিটি বাঘের শরীরের ডোরা মানুষের আঙুলের ছাপের মতো আলাদা আলাদা হয়। ২০২৪ সালের ২৯ জুলাইয়ে এই জরিপের ফলাফল জানা যাবে।
বাঘশুমারি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ে পাওয়া ছবি বন অধিদপ্তরের রিসোর্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইউনিটে বিশ্লেষণ চলছে। শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের কাজ শেষ হলেও ক্যামেরাগুলো সেখানে পাঠানো হবে। এর আগে বনের দুটি রেঞ্জে পাওয়া ছবি দেখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, শুমারিতে খুলনা রেঞ্জে বাঘের আশাব্যঞ্জক উপস্থিতির চিত্র পাওয়া গেছে।
মফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, প্রতিটি গ্রিড বা স্টেশনে দুই পাশে দুটি ক্যামেরা বসানো হবে। প্রথম পর্যায়ে (পশ্চিম অংশে) বাঘ গণনার পাশাপাশি বাঘের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত বনে থাকা হরিণ ও শূকরের সংখ্যাও গণনার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই গণনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাল জরিপের কাজও পুরো সুন্দরবনে শেষ হয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩ হাজার ৮৪০টি বাঘ প্রকৃতিতে টিকে আছে। তার মধ্যে সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘ আছে ১১৪টি। যা ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি ও ২০০৪ সালের জরিপে ছিল ৪০৪টি।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর আওতায় সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার কাজ করা হবে। এর মধ্যে ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ করা হবে বাঘ গণনায়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত। ২০২২ সালের মার্চে প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।