রাজশাহীতে দুই দিনব্যাপী মাছ ধরার উৎসবে শৌখিন শিকারিরা
রাতভর না ঘুমিয়ে গান গেয়েছেন গায়েন আতিকুর রহমান। ঘুম জড়ানো চোখ নিয়েই ভোরের আলো ফোটার আগে আগে সরাসরি চলে গেছেন জলাশয়ের পাড়ে। সেখানে ছিপ-বড়শি হাতে নিয়ে বসতেই চোখ-মুখ থেকে যেন উধাও হয়েছে সব ক্লান্তি-অবসাদ। মুচকি হেসে কারণ জানালেন তিনি, ‘ছোডোবেলা থেকেই মাছ ধরার খুব শখ। মাছ পাই আর না পাই, এতে খুউব আনন্দ হয়।’
আতিকুরের মতো বিভিন্ন পেশার মানুষজন গতকাল শুক্রবার জড়ো হন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুরিয়া ইউনিয়নের মাহেন্দ্রা বাজার এলাকার ১০ বিঘার এক জলাশয়ে। তাঁদের সবার মধ্যে একটি বিষয়েই সবচেয়ে বেশি মিল, সবাই শৌখিন মৎস্যশিকারি। গতকাল সারা দিন মাছ ধরেছেন তাঁরা। আজ শনিবারও চলছে দিনব্যাপী মাছ ধরার এই উৎসব। এমন উৎসবে শামিল হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। মাছ ধরা দেখতে তাঁরা শিকারিদের ঘিরে ভিড় জমান।
মৎস্যশিকারিরা বলেন, ভোরের আলো ফোটার মুহূর্তেই মাছ ধরা শুরু হয়। একেবারে সন্ধ্যায় মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মাছ ধরা বন্ধ করতে হয়। এ কাজে তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন মাছ ধরার নানা উপকরণ। গতকাল সারা দিনে তাঁরা বড়শিতে আটকিয়েছেন রুই, কাতলা, বোয়াল, মাগুর, তেলাপিয়া, কালবাউশ, পাঙাশসহ দেশীয় প্রজাতির অসংখ্য মাছ।
পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিখর গ্রাম থেকে সেখানে মাছ ধরতে যান সিরাজুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, ‘এটা একটা উৎসব। সারা দিন থাকব, মাছ ধরব—এটাই আরকি।’ সিরাজুলের দলে ৯ জন মৎস্যশিকারি আছেন। তাঁরা সবাই শখের বশেই মাছ ধরেন। দুই দিনের এই মাছ ধরার উৎসবে অংশ নিতে তাঁদের গুনতে হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে মাছ ধরার জন্য কিছু উপকরণও কিনেছেন।
প্রায় তিন কেজির একটি বোয়াল ধরার দাবি করেন জুয়েল রানা নামের এক মৎস্যশিকারি। তিনি বলেন, বোয়ালটি বড়শিতে ধরেছেন এটাই বড় কথা।
আজ শনিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, শৌখিন মৎস্যশিকারিদের কারও বড়শিতে মাছ উঠলেই চিৎকার করে উৎসাহ জোগাচ্ছেন অধিকাংশ লোকজন। তাঁদেরই একজন মো. কামাল। তিনি বলেন, তাঁর বাড়ি জলাশয়ের পাশেই। দিনে বেশ কয়েকবার মাছ ধরা দেখেন তিনি। যখনই কেউ বড় মাছ পায়, তখনই তাঁকে সবাই মিলে বাহবা দেন।
মাছ ধরার সুবিধার্থে বাঁশ ও কাঠের গুঁড়ি দিয়ে ২২টির মতো মাচা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান জলাশয়ের মালিক ও মৎস্যশিকারিরা। তাঁরা বলেন, প্রত্যেক মাচায় অন্তত ৮-৯ জন বসে মাছ ধরতে পারেন। দুই দিনের জন্য প্রতি মাচা বাবদ দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ জনের মতো মৎস্যশিকারি এতে অংশ নিয়েছেন।
মৎস্যশিকারিরা অভিযোগ করে বলেন, জলাশয়ের মাছগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট। তবে সব ধরনের মাছই পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম দিনই অনেক মাচায় ২০-২২ হাজার টাকার মাছ পেয়েছেন শিকারিরা।
এবারই প্রথম জলাশয়টিতে মাছ ধরার উৎসবের আয়োজন করেন মালিক রমজান আলী। তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত আছেন। এবারই প্রথম এ পদ্ধতিতে মাছ বিক্রি করছেন। গ্রামটিসহ শহরের অনেকেই মাছ ধরতে এসেছেন। দুই দিন খুব আনন্দ হচ্ছে। আশপাশের মানুষও আনন্দ পাচ্ছেন। লাভ বা ক্ষতি যা–ই হোক না কেন, আনন্দই সব।