রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রদের হয়রানি বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রগতিশীল শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষকেরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। তাঁরা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ১০ দফা দাবির কথা জানিয়েছেন।
অপরদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ৯ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ক্যাম্পাসে মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে। ৯ দফা না মানা হলে তাঁরা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রগতিশীল শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন সিনেট ভবনের পাশে রাস্তায় অবস্থান করেন। অপরদিকে তার পাশেই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের পাশ থেকে মিছিল বের করেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা। তাঁরা মিছিল শেষ করে প্যারিস রোডে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাবেশে মিলিত হন।
প্রগতিশীল শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এস এম এক্রাম উল্লাহ। এতে বক্তব্য দেন প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, আইন বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান প্রমুখ।
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ বলেন, ‘কোটাপ্রথার আন্দোলন একটা পর্যায়ে এসে খুব অস্থির অবস্থার দিকে দেশকে নিয়ে যায়। এতে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এ জন্য তাঁদের অন্তর কাঁদছে। এই রক্তপাত হয়তো এড়ানো যেত। সবার জানা, একটি মহল এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাঁদের লেবাস পর্যন্ত পরিবর্তন করেছে। তাঁদেরই অনেক সহকর্মী বিভিন্ন ব্যানারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে।’
আবু নাসের মো. ওয়াহিদ আরও বলেন, ‘এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ভুলগুলো হয়েছে, তার আত্মসমালোচনা আমাদের করতে হবে। অবশ্যই ভুল ছিল। এই ভুল যদি স্বীকার না করি, তাহলে এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের কথাটি বললেই হবে। কাজেকর্মে থাকতে হবে। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার শিক্ষক বলেই আমি দুর্নীতি, অন্যায়-অনিয়ম করার লাইলেন্স পাইনি। গতকাল হাইকোর্টে একটি কথা বলা হয়েছে, প্রত্যেকের ওপর যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে, সেই দায়িত্ব যেন আমরা পালন করতে পারি। কেন রক্তপাতহীন আন্দোলন ছাড়া এই দেশে এখনো কোনো দাবি মানা হয় না। সামনের দিকে এর সমাধানের পথ বের করতে হবে।’
প্রগতিশীল শিক্ষকসমাজের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন ১০ দফার দাবির কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি করা হয়। এগুলো হচ্ছে ১. অনাকাঙ্ক্ষিত হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে ২. ছাত্রদের দাবির আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের পেছনে অনেকগুলো কারণের একটা হচ্ছে ঘুষ-দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তাই সরকারের কাছে উদাত্ত আহ্বান তারা ঘুষ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং দ্রব্যমূল্য নাগালে আনতে শক্ত পদক্ষেপ নেবে ৩. এই আন্দোলনে যেসব সাধারণ শিক্ষার্থী ছিলেন, যাঁরা কোনো অপকর্মে ছিলেন না, তাঁদের যেন কোনো হয়রানি ও দুর্ভোগ না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে ৪. কোটা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, কিন্তু কোনো অপরাধে জড়িত না, এমন ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে হবে। দেশব্যাপী নৈরাজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসমূলক কাজে জড়িতদের ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও তাঁরা পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো ১. ক্যাম্পাসের প্রতিটি ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ২. আবাসিক হলগুলোয় নিয়মমাফিক মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ছাত্রদের আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে ৩. কোনো রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সংগঠনের নামে ছাত্রদের ওপর অত্যাচার বা তাদের কোনোরকমের অমর্যাদা হয়, এমন কাজ বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে ৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্র ছাড়া অন্য কেউ আবাসিক হলে অবস্থান করতে পারবে না ৫. কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের আইনি বা অন্য কোনো ধরনের হয়রানির যেন শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯ দফার সমর্থনে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের মিছিল
বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা মিছিল শেষে সমাবেশে বলেন, শিক্ষার্থীদের ৯ দফা মেনে নিন। অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন। লাশ নিয়ে এই সরকার রাজনীতি করছে। ইট, পাথর, বালুর মূল্য বেশি এই শহীদদের মূল্যের চেয়ে, তা নিয়েই মায়াকান্না করছে। এ দেশের বর্তমান প্রজন্ম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এই মায়াকান্না বুঝতে কষ্ট হয় না। শিক্ষার্থীদের এই ৯ দফা দাবি না মানলে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানাবেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অধ্যাপক হাছানাত আলী বলেন, ‘সরকার আমাদের বোকা ভেবেছে। আইনমন্ত্রী কয়েক দিন আগে বলেছেন, আমার দেশের ছেলেমেয়েরা কোনো ভাঙচুর করেনি। তাহলে কেন প্রতিদিন রাতে ব্লক রেইড দিয়ে আইডি কার্ড দেখে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সরকারের এই দ্বিচারিতাকে তাঁরা ঘৃণা করেন। সরকার তার কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। ছাত্র আন্দোলন পরাজিত হতে পারে না। তারা জয়ী হবেই।’ অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।