‘দুর্গে’ও দুর্বল বিএনপি, মামলা–গ্রেপ্তারের আতঙ্কে মাঠে নেই নেতা–কর্মীরা
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়ার গাবতলী। এর সঙ্গে পাশের শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসন। ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৭ থেকে একাধিকবার জয়লাভ করেছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু চলমান আন্দোলনে দলের এই ‘দুর্গে’ খুব নাজুক অবস্থা বিএনপির। পুলিশের মামলা আর গ্রেপ্তারের ভয়ে মাঠে নেই শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
শাজাহানপুর উপজেলায় বরাবরই শক্ত অবস্থান ছিল বিএনপির। উপজেলা এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে পদধারী হাজার হাজার নেতা-কর্মী থাকলেও আন্দোলনের মাঠে দেখা মিলছে না তাঁদের। আন্দোলনে দলীয় নেতা–কর্মীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করছেন নেতারাও। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা অবশ্য এ জন্য দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে দায়ী করেছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের মামলা-হামলার ভয়ে দলীয় কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কমেছে। রাজপথে দাঁড়ালেই পুলিশ গুলি করছে। মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করছে। এ কারণে দলীয় কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপিকে দুর্বল করার নেপথ্যে জেলা বিএনপির কতিপয় নেতা দায়ী। ত্যাগীদের বাদ দিয়ে পকেট কমিটি করার পর থেকেই দলে একটি অংশ নিষ্ক্রিয়। বিশেষ করে উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল বাসারের নেতৃত্বাধীন অংশ দলে কোণঠাসা। আবার আবুল বাসারও ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে সিরাজগঞ্জ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। ফলে আন্দোলনে শক্ত অবস্থান নেই বিএনপির।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা বিএনপি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি আছে। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আছে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সদস্যসংখ্যা ৬৩৯ জন। প্রতিটি ওয়ার্ডে আছে ৫১ সদস্যের কমিটি। আবার ৮১টি ওয়ার্ডে সদস্য আছেন ৪ হাজার ১৩১ জন। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড বিএনপিতে নেতা-কর্মী আছেন ৪ হাজার ৭৭০ জন। কিন্তু এরপরও হরতাল অবরোধে শ খানেকের বেশি নেতা-কর্মী মিলছে না।
সাম্প্রতিক হরতাল-অবরোধে শাজাহানপুর উপজেলার বনানী এলাকায় বগুড়া থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা গিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। সেখানে শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেখা দেখা পাওয়া যায়নি।
শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ইদ্রিস আলী সাকিদার বলেন, একসময় দলীয় কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীর ঢল নামত। এখন পুলিশের মামলা-হামলা আর গ্রেপ্তারের ভয়ে দলীয় কর্মসূচিতে কেউ আসতে চান না। একই সুরে গোহাইল ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, কমিটির পদে থাকলেও অনেক নেতা-কর্মী এখন দলীয় কর্মসূচিতে আসেন না।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা যুবদলের ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি আছে। প্রতিটা ইউনিয়নেও ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে। ৯টি ইউনিয়নে কমিটিতে সদস্যসংখ্যা ২৭৯। আন্দোলনের মাঠে দেখা মিলছে না অনেককেই।
শাজাহানপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সোহেল আরমান বলেন, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতি করে কমিটি করা হয়েছে। ফলে সুবিধাবাদী অনেকেই এখন নেই।
শাজাহানপুর উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল্লাহ ছোটন বলেন, তাঁদের উপজেলা কমিটি ১২১ সদস্যবিশিষ্ট। প্রতিটি ইউনিয়নে ১১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। ৯টি ইউনিয়নে পদধারী নেতার সংখ্যাও অনেক। তবু আন্দোলনের মাঠে নেই অনেক নেতা-কর্মী।
শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি দলীয় কর্মসূচিতে সবার উপস্থিতি নিশ্চিত করার। কিন্তু পুলিশ দাঁড়াতেই দিচ্ছে না।’
উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের ফুলকোট গ্রামের যুবদল কর্মী নুরুজ্জামান শামীম বলেন, ‘১৫ বছর ধরে সংগঠন করছি। নাশকতার ১৬টি ঝুলছে ঘাড়ে। অনেকটা অভিমান করেই এবার আন্দোলন কর্মসূচিতে মাঠে নামছি না।’
গোহাইল ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নাশকতার আটটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাজিরা দিতে দিতে জীবন শেষ। তবু কোনো কমিটিতে নেই আমি। দলে ত্যাগীদের মূল্যায়ন হয় না।’