গাছের পাতায় এক বর্ণিল মথ

মৌলভীবাজারের মাগুরছড়া পুঞ্জিতে দেখা মিলেছিল এই মথের
ছবি: সংগৃহীত

সেদিন শুক্রবার। দুপুর হয়ে এসেছে। শরতের উজাড় করা রোদ নেমেছে গাছে-গাছে, পাতার ফাঁকফোকরে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন মাগুরছড়া পুঞ্জির গাছের ডালে, ফুল আর পাতায় ওড়াউড়ি করছিল প্রজাপতির দল। হঠাৎ একটা বড় আর বর্ণিল প্রজাপতির মতো পতঙ্গ দেখে চমকে যেতে হয়!

পেয়ারাগাছের পাতায় পতঙ্গটি প্রথম দেখেন মাগুরছড়া পুঞ্জির গ্রামপ্রধান ও খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি জিডিশন প্রধান সুচিয়াং। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হঠাৎ করে দেখি পেয়ারাগাছে কই থাকি একটা বিশাল প্রজাপতি উড়ে আইছে। আমি জীবনে এত বড় প্রজাপতি আর দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম। প্রজাপতির রং, আকার নিয়ে অনেকটা সময় বিস্ময়ের ঘোর লেগেছিল।’

জিডিশন বলেন, ‘লাউয়াছড়ার কাছে পুঞ্জি হওয়ায় ছোট-বড় বিভিন্ন রঙের অনেক প্রজাপতি দেখেছি। কিন্তু এত বড় প্রজাপতি দেখে চোখ ফেরাতে পারছিলাম না।’ বললেন, নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে প্রজাপতিটির আকার মাপার চেষ্টা করেন তিনি। সামান্য এদিক-সেদিক হলেও পাতায় বসা অবস্থায় প্রজাপতিটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১২ ইঞ্চি ও প্রস্থে ৬ ইঞ্চির মতো ছিল। প্রায় ছয় ঘণ্টা প্রজাপতিটি পেয়ারাগাছে ছিল। ঝোড়ো বাতাস শুরু হলে পাশের জাম্বুরাগাছে গিয়ে একটু বসে। এরপর গভীর বনের দিকে উড়ে চলে যায়।

ওই পতঙ্গের ছবি পাঠিয়ে জানতে চাইলে পাখি ও বন্য প্রাণী চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ আ ন ম আমিনুর রহমান বলেন, এটা আসলে অ্যাটলাস মথ। দেখতে রঙিন প্রজাপতির মতো হলেও অ্যাটলাস হলো এক প্রজাতির মথ। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিবাসী এই মথের লালচে দেহের ওপর বিশাল আকারের ডানায় রয়েছে লালচে-বাদামি, গোলাপি, সাদা ও কালো রঙের জটিল নকশা। এই মথ শিকারিদের কাছ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য তীব্র গন্ধযুক্ত স্প্রে করে। প্রসারিত অবস্থায় অ্যাটলাস মথের ডানা ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়। বিশ্বের বড় মথের তালিকায় এর অবস্থান তৃতীয়।