শ্রীপুরে ঋণের টাকা না পেয়ে গৃহবধূর ঘরে তালা দিলেন এনজিও কর্মী

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় এক গ্রাহকের বসতঘরে তালা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটায় তোলাছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ঋণের কিস্তি শোধ করতে না পারায় এক গ্রাহকের ঘরে বেসরকারি একটি ঋণদাতা সংস্থার (এনজিও) কর্মীরা তালা দিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার শ্রীপুর পৌর এলাকার চন্নাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখার মাঠকর্মী কবির হোসেন এ তালা লাগিয়েছেন। বিষয়টি স্বীকার করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কিস্তির টাকার জন্য লাগাতার কয়েক দিন ওই বাড়িতে গেলেও পরিবারের কারও দেখা পাননি। ফোন দিলেও তাঁরা ধরছিলেন না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়েছেন তিনি।

ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া ওই গ্রাহকের নাম শামীমা আক্তার (২৮)। তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দেওয়ানবাড়ি গ্রামের মো. আলাউদ্দিনের স্ত্রী। তবে স্বামীর সঙ্গে শ্রীপুরের চন্নাপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে থাকেন তিনি। সেখানে থেকে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকরি করছিলেন। তাঁর স্বামী আলাউদ্দিন বাসচালকের সহকারীর কাজ করেন।

শামীমা আক্তারের দাবি, কয়েক দিন ধরে তাঁর শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ জন্য গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘরে তালা দিয়ে স্বামী-সন্তানসহ শাশুড়িকে দেখতে যান তিনি। পরে ২৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফিরে এসে দেখেন, তাঁদের ঘরের দরজায় আরও একটি তালা লাগানো। পরে জানতে পারেন এনজিওর লোকজন তালা লাগিয়েছেন।

গ্রাহক শামীমা গতকাল রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি তিনি আম্বালা ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন। এই ঋণ প্রতি মাসে ৯ হাজার ৫০০ টাকা হারে পরিশোধ করার কথা। তিনি নিয়মিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর চাকরি চলে যাওয়ায় একটি কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেননি। এ জন্য এনজিও প্রতিষ্ঠানের লোকজন তাঁর ঘরে তালা দিয়েছেন।

শামীমা আক্তারের স্বামী আলাউদ্দিন বলেন, তাঁরা দুজন আয় করে নিয়মিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর স্ত্রীর চাকরি চলে যাওয়ায় দুই সন্তানের খরচ ও সংসারে ব্যয় একা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ তাঁর মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় সেখানে অতিরিক্ত টাকা খরচ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী একটি কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি। এ কারণে এনজিও কর্মীরা তাঁর ঘরে তালা দিয়ে দেন।

এ ঘটনার পর গতকাল রাতে দীর্ঘক্ষণ বাইরে থাকার পর বিকল্প উপায়ে ঘরে প্রবেশ করেন শামীমা-আলাউদ্দিন দম্পতি ও তাঁদের সন্তানেরা। এ বিষয়ে আজ শুক্রবার সকালে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আবদুল মজিদ নামে তাঁদের একজন প্রতিবেশী জানিয়েছেন, গতকাল রাতে শামীমা আক্তার পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘরেই ছিলেন। তালা না খুলে বিকল্প পথে ঘরে প্রবেশ করেছেন তাঁরা।

আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক আশিকুল ইসলাম মুঠোফোনে আজ বেলা ১১টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতিতে পড়ে ওই ঘরে তালা লাগাতে হয়েছিল। ওই গ্রাহক কিস্তি পরিশোধের ভয়ে ঘর খোলা রেখেই চলে গিয়েছিলেন। আমাদের মাঠকর্মী অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে অবশেষে দরজায় তালা লাগাতে বাধ্য হয়েছেন। তালা না লাগালে ওই গ্রাহক কোনো অপবাদ দিতে পারেন এই আশঙ্কা থেকেই কাজটি করা হয়েছে। পরে অবশ্য গ্রাহক তালা লাগানো আংটা খুলে ঘরে প্রবেশ করেছেন।’ আশিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আজ দুপুরের আগেই গ্রাহকের কাছে স্যরি বলে নেব। কাজটি করা আমাদের ঠিক হয়নি।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ জামান বলেন, ঘরে তালা লাগিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনায় তাঁরা অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।