হিজলায় ১০টি মাছঘাট লুটের মামলা, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ৬ সাংবাদিক আসামি

মামলা
প্রতীকী ছবি

বরিশালের হিজলা উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১০টি মাছঘাট লুট করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। হিজলা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল গাফফার তালুকদার বাদী হয়ে আজ বুধবার দুপুরে থানায় এ মামলা করেন।
মামলায় হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হিজলা-গৌরব্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলায় মোট আসামি ১০০ জন। মামলায় স্থানীয় ছয়জন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে নজরুল ইসলাম ও বড় জালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক ভেলা ব্যাপারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আজ দুপুরে ওই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

বাদী মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে গত ২৮ জুলাই মেঘনা তীরের জানপুর, চরকিল্লা, খালিসপুর, কেউরিয়া, সাওয়া-সৈয়দপুর, পূর্বমান্দা এলাকার তাঁর (আবদুল গাফফার) ১০টি মাছঘাট ও আড়তে হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারী ব্যক্তিরা কুপিয়ে-পিটিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেন। পরে এসব আড়ত ও ঘাট থেকে অর্ধকোটি টাকা, সাতটি মাছ ধরা ট্রলার, কয়েকটি জেনারেটরসহ অন্য মালামাল লুট করে নিয়ে যান।

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানায়, মেঘনা নদীর ২২ কিলোমিটার অংশ হিজলা উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। এই অংশে অসংখ্য টংঘর তুলে চলে ইলিশ ধরা ও বেচাকেনার কাজ। বছরে কয়েক শ কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হয় এই ঘাটগুলোতে। এলাকাটি দেশের ষষ্ঠ ইলিশের অভয়ারণ্য। এই বিশাল মাছের সাম্রাজ্য আগে নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় তিন আওয়ামী লীগ নেতা।

গত ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর বিএনপির স্থানীয় তিন নেতা এসব মাছঘাটের নিয়ন্ত্রণ নেন। তাঁদের মধ্যে একজন আবদুল গাফফার। তাঁর বিরুদ্ধে একই সঙ্গে চরের জমি, বালু মহালসহ বিভিন্ন স্থাপনার দখল নেওয়ারও অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি কয়েক দফায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এসব ঘটনার পর মামলা করলেন আবদুল গাফফার তালুকদার।

আরও পড়ুন

এদিকে বিএনপির নেতা আবদুল গাফফারের করা মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে স্থানীয় ছয়জন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা হলেন হিজলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং দৈনিক যুগান্তর ও মাই টিভির হিজলা প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন, হিজলা প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক ও দৈনিক ইত্তেফাকের হিজলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ আরহাজ সরদার, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি মিলন সরদার, দৈনিক মানবজমিনের প্রতিনিধি কাজী মহসিন, দৈনিক আজকের বার্তার প্রতিনিধি হুমায়ুন নলী ও দৈনিক বাংলাদেশ বাণীর হিজলা প্রতিনিধি শাহে আলম।

হিজলা প্রেসক্লাবের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। তারপরও সাংবাদিকদের রাজনৈতিক মামলায় জড়ানোর কারণ কী, তা জানি না। এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি চরম আঘাত। সত্য প্রকাশ না করার জন্য পরোক্ষ চাপ ছাড়া আর কিছুই নয়।’

আরও পড়ুন

রিপোর্টার ইউনিটের সভাপতি মিলন সরদার বলেন, ছয়জন সাংবাদিককে রাজনৈতিক মামলায় আসামি করার ঘটনায় তাঁরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাতে সাংবাদিকেরা যেন সংবাদ করতে না পারেন, সে জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

বিএনপির নেতা ও মামলার বাদী আবদুল গাফফার তালুকদারকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি সাড়া দেননি।

হিজলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম প্রথম আলোক বলেন, মামলার প্রধান আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের বাদী মামলায় আসামি করেছেন। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।