হবিগঞ্জে সাত মামলায় বিএনপির সহস্রাধিক নেতা-কর্মী আসামি, গ্রেপ্তার ৪২

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাতে হবিগঞ্জে সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেক বিএনপি নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। সপ্তাহ ধরে বন্ধ আছে জেলা বিএনপির কার্যালয়।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে তাঁরা জড়িত না থাকলেও পুলিশ একে একে মামলা দিয়ে তাঁদের হয়রানি করছে। তবে পুলিশের ভাষ্য, বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে মামলার আসামি করা হয়েছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করার সুযোগ নেই।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর হবিগঞ্জ জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বড় ঘটনা ঘটে ১৮ জুলাই হবিগঞ্জ জেলা সদরে। ওই দিন পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের টানা সাড়ে চার ঘণ্টা সংঘর্ষ হয়। এতে ৩৭ পুলিশসহ আহত হয়েছেন ২০০ জন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ছররা গুলিতে আহত। এক সপ্তাহে হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, লাখাই, বাহুবল, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও মাধবপুরে পুলিশ সাতটি মামলা করেছে। নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে।

হবিগঞ্জ সদর থানায় করা মামলায় বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছসহ ৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। অপর ছয়টি মামলায় উপজেলা পর্যায়ের বিএনপির শীর্ষ নেতাসহ ছয় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে মামলার আসামি ধরতে পুলিশ নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। কয়েকটি অভিযানে পুলিশ আজ দুপুর পর্যন্ত ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি ফরিদ আহমেদ অলিসহ ৩৮ জনই বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। গ্রেপ্তার অপর চার শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশার লোক।

আজ বিকেলে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয় তালাবন্ধ দেখা গেছে। আশপাশের লোকজন জানান, কয়েক দিন ধরে কার্যালয়টি খোলা হচ্ছে না। পাশাপাশি বিএনপির কোনো কর্মসূচিও চোখে পড়েনি।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশ বারবার অভিযান চালানোর কারণে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তারের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এতে জেলার শীর্ষ নেতাসহ উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও আত্মগোপনে গেছেন।

জি কে গউছ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হবিগঞ্জে কোটা সংস্কার নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছে, এর সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। পুলিশ জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমন করতে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিচ্ছে। এখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা হয়রানির ভয়ে বাড়িছাড়া।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে মামলায় নিরপরাধ কাউকে যেন আসামি করা না হয়। বিভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে মামলায় আসামি করা হচ্ছে। এখানে নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হওয়ার সুযোগ নেই।