নিরাপদ পানি ও খাবারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল
নিরাপদ পানি ও খাবারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ক্রিয়াশীল সাতটি ছাত্রসংগঠন। আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘ছাত্র মারা প্রশাসন চাই না, চাই না’, ‘জন্ডিসে ছাত্র মরে প্রশাসন কী করে’, ‘জন্ডিসের খাবার আর না, আর না’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ক্রমাগত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন করা হয়, কিন্তু ক্যাম্পাসে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে পারছে না প্রশাসন। শিক্ষকদের জন্য এসি বাসের ব্যবস্থা করা হয়, কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।
ক্যাম্পাসে বিশুদ্ধ পানিসংকটের বিষয়টি তুলে ধরে নাগরিক ছাত্র ঐক্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেহেদী হাসান বলেন, ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনগুলোতে বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা আছে। ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতেও সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার পরিবেশন করা হয়। এসব খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা জন্ডিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতিমধ্যে এক শিক্ষার্থী মারাও গেছেন। প্রশাসন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা না করলে আরও বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্য শামীম ত্রিপুরা বলেন, ক্যাম্পাসে দুর্নীতির কারণে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ছে ও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে শিক্ষার্থী মারা যাচ্ছে। তবু প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কোনো চিন্তা করছে না। বরং তারা সরকারের আনুগত্য প্রকাশ করতেই ব্যস্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২৪ শিক্ষার্থী জন্ডিস পরীক্ষা করেছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩১ জন শিক্ষার্থীর দেহে জন্ডিস ধরা পড়েছে। এ হিসাবে গড়ে প্রতিদিন ছয়জন শিক্ষার্থী এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মো. মুরাদ আহমেদ মৃধা। মুরাদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মুরাদ প্রথমে লিভার ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে কিডনি বিকল হওয়ার রোগ দেখা দিলে তাঁকে কিডনি ওয়ার্ডে প্রেরণ করা হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।