রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের পক্ষে সাত ছাত্রসংগঠন, আপাতত আন্দোলন নয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনায় আপাতত কোনো আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নেবে না সাত ছাত্র সংগঠন। এই ঘটনাকে ঘিরে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে রেললাইনে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই উল্লেখ করে সংগঠনগুলো বলছে, তাঁরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পক্ষে।
সংগঠন সাতটি হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন ও নাগরিক ছাত্র ঐক্য। গতকাল রোববার দিনগত রাতে ছাত্র ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রায়হান আফরোজ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর বিনোদপুর বাজারের স্থানীয় লোকজনের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠনগুলো সংহতি জানিয়ে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হয়। তাঁরা বরাবর শিক্ষার্থী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। সম্প্রতি চলমান আন্দোলনকেও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার জন্য তাঁরা চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থের লড়াইয়ে তাঁরা অতীতেও ছাত্রদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
সংগঠনগুলো বলছে, এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। গত রাতে একটি গোষ্ঠী চারুকলা গেটসংলগ্ন রেললাইনে অবস্থান করে। যার ফলে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এটা কোনো আন্দোলনের চিত্র হতে পারে না। যারা সেখানে অবস্থান করছেন, তাঁরা একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন। তাঁদের সঙ্গে এই ছাত্রসংগঠনগুলোর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এর আগে গতকাল বিকেলে সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা উপাচার্যের বাসভবনে বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে যান। তাঁদের দাবিগুলোর মধ্যে ছিল ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ উপাচার্যকে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করে সব ব্যয় প্রশাসনকে বহন করা।
ছাত্র ফেডারেশন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রায়হান আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে অধিকার আদায় করতে চান। গতকাল তাঁরা উপাচার্যের কাছে দাবিদাওয়া দিয়েছেন। উপাচার্য দাবি মানার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তাই আজ সোমবার তাঁরা কোনো কর্মসূচি পালন করছেন না। পরিস্থিতি অনুযায়ী পরে আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে।
গত শনিবার বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহীতে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। বাসের আসনে বসা নিয়ে তাঁর সঙ্গে ওই বাসের চালক ও সহকারীর বচসা হয়। পরে বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকে পৌঁছালে তাঁদের সঙ্গে আবার বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান ওই শিক্ষার্থী। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে ওই দোকানদারের ওপর চড়াও হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। তখন শিক্ষার্থীরাও তাঁদের পাল্টা ধাওয়া দেন। এর পর থেকে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো বিনোদপুর এলাকা।
স্থানীয় ব্যক্তিদের হামলা-সংঘর্ষ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে এখনো ৯০ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন এক শিক্ষার্থী। ছয়জন শিক্ষার্থীর চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।