বান্দরবানে বম জনগোষ্ঠীর সাধারণ লোকজন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে কেএনএফের সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বম জনগোষ্ঠীর সাধারণ লোকজনকে নিরাপদে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
জেলা শহরের উজানী পাড়া এলাকায় আয়োজিত আজ রোববার বিকেল চারটায় এক মানববন্ধন থেকে বমরা এই কেএনএফ বর্জনের ঘোষণা ও নিরাপদ জীবনযাপনের সুযোগের আহ্বান জানিয়েছেন। সাধারণ বম জনগোষ্ঠীর ব্যানারে কেএনএফ কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনার প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইয়াং বম অ্যাসোসিয়েশনের (ওয়াইবিএ) সদস্য লাল পেক থার বম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরীহ বমরা রাজনীতির চালচলনের সঙ্গে পরিচিত না। বর্তমানে কেএনএফের সদস্যদের অপকর্মে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপ্রিয় বম জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। শত শত নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু প্রাণভয়ে বনে–জঙ্গলে পালিয়ে জীবনযাপন করছে, দেশান্তরী হয়েছে অনেকে। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে স্পষ্ট কণ্ঠে বলতে চাই, কতিপয় পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী কেএনএফের সদস্যের অপকর্মকে আমরা সমর্থন করি না এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা সাধারণ জনগণ শান্তিতে থাকতে চাই। তাই কেএনএফ বা কেএনএ সংগঠনকে বর্জন ঘোষণা করছি।’ লিখিত বক্তব্যে কেএনএফের সবাইকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসারও আহ্বান জানানো হয়েছে।
বম জনগোষ্ঠীর সবাই কেএনএফের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় উল্লেখ করে লাল পেক থার লিখিত বক্তব্যে বলেন, নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যাংক ডাকাত ও অস্ত্র লুটকারী কেএনএফের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে নিরীহ বমরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
নারীদের সংগঠন বম নুনাও ম্রুই (বিএনএম)–এর সভানেত্রী ঙুন চুয়ান বম আবেগঘন বক্তব্যে বলেছেন, ‘বমরা সবাই কেএনএফ—এ রকম ভুল দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। আমরা ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুট করিনি, করেছে কেএনএফের সন্ত্রাসীরা। খুব স্বাভাবিক বিষয়, ডাকাতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু কতিপয়ের অপরাধে অনেক শিক্ষার্থী এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না।’ কেএনএফের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও সাধারণ বমদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে কেএনএফ ব্যাংক ডাকাতি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র লুট করে। ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী কেএনএফ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করছে।