২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি আরও বেড়েছে, ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন

বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় আটকা পড়েছেন অনেকে। খবর পেয়ে রেড ক্রিসেন্টের কর্মী ও তরুণেরা তাঁদের উদ্ধার করছেন। গত বুধবার বিকেলে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দেওয়ানজি বাড়ি এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আজ শুক্রবার জেলার ৫টি উপজেলায় বন্যার পানির উচ্চতা গতকালের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি হেলে পড়ায় ও তারে গাছ উপড়ে পড়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলার মেঘনা নদীসহ খাল-বিলের পানি বেড়ে গেছে। এতে জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন এখন পানিতে ডুবে আছে। যেদিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু পানি আর পানি। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠের পর মাঠ পানিতে ডুবে আছে। এ কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন লাখো মানুষ।

আরও পড়ুন

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৫ লাখ ৩৭ হাজার গ্রাহক আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে তিন দিন ধরে তাঁদের বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলায় ১৩টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে আছে। উপকেন্দ্রগুলো ছুঁই ছুঁই করছে পানি। পানি বেড়ে ভেতরে ঢুকলে জেলায় পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা আছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় অনেক বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়েছে। অনেক স্থানে গাছ উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। এতে তারগুলো পানিতে ডুবে গেছে।

বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। বাড়ির আঙিনা ও ঘরে পানি আর পানি। রায়পুর উপজেলার সোনাপুরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন আছেন। গ্রাহকের নিরাপত্তার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। চার দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা সাময়িক জানিয়ে তিনি বলেন, পানি কমে গেলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
এদিকে টানা পাঁচ দিনের ভারী বর্ষণে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৪০ হাজার পুকুর ডুবে চাষের প্রায় সব মাছ ভেসে গেছে। এতে জেলায় মৎস্য খাতে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় চাষাবাদ করা প্রায় ৫৪ হাজার পুকুর আছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার পুকুর ডুবে ৯০ শতাংশ মাছ ভেসে গেছে। ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির চাষের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে মৎস্যচাষিদের প্রায় ৮০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নদীতে ভাটা এলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব কটি স্লুইচ গেট খুলে দেওয়া হয়। আবার জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তাঁদের কর্মীরা পর্যবেক্ষণে আছেন। এখনো মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। এক-দুই দিনের মধ্যে পানি ধীরে ধীরে কমতে পারে।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, দুর্গত মানুষদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।