রুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

রুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রুয়েটের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কেছবি: প্রথম আলো

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে দুই দফায় দুই স্থানে তাঁরা সড়ক অবরোধ করেন। এর আগে তাঁরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন।

আজ দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন। সেখানে আধা ঘণ্টার মতো থেকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারী মোড় হয়ে ভদ্রা মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় সেখানে চারটি রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। ভদ্রা মোড়ে শিক্ষার্থীরা আধা ঘণ্টা অবস্থান করে বেলা দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নেন।

গতকাল সোমবার রাতে দুই দফা হামলার শিকার হন রুয়েট শিক্ষার্থীরা। নগরের পদ্মা আবাসিক এলাকার পাশে হজোর মোড়ে এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। এর মধ্যে গতকাল রাত থেকে তিন শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ ঘটনায় রাতেই রুয়েটের উপপরিচালক (সিকিউরিটি) জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। রাতেই দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রুয়েট শিক্ষার্থী রকি ও শুভ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য পদ্মা আবাসিকের হজোর মোড়ে যান। কেনাকাটা শেষে ৫০০ টাকার নোট দিলে দোকানদার শাহাবুদ্দিন জানান তাঁর কাছে খুচরা নেই। তখন শিক্ষার্থীরা আরও জিনিস কিনে টাকাটা ভাংতি করতে বলেন। দোকানদার এতে বাজে আচরণ করেন তাঁদের সঙ্গে। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে দোকানদার তাঁদের গায়ে হাত তোলেন। সেখানে শিক্ষার্থী শুভর মাথায় স্থানীয় একজন বাঁশ দিয়ে আঘাত করেন। রকিকেও মারধর করা হয়। পরে তাঁরা তাঁদের ব্যাচের অন্যদের ফোনে খবর দেন। সেখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকেরাও উপস্থিত হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে বাজারের বণিক সমিতির সঙ্গে কথা বলছিলেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় দ্বিতীয় দফায় হামলা করা হয় শিক্ষার্থীদের ওপর। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অবরোধকালে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঝেমধ্যেই স্থানীয়দের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়। সামান্য কিছু হলেই স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলেন। গতকাল তাঁদের শিক্ষকেরা হজোর মোড়ে কথা বলতে যান। তখন দ্বিতীয় দফায় হামলা করা হয়। এ ঘটনায় এজাহারে থাকা দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদেরও আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।

ভদ্রা মোড়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র তানজিমুল হক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন। দ্রুত পাঁচ দফা না মানা হলে আবারও তাঁরা রাস্তা অবরোধ করবেন বলে জানান।

শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা হলো হামলার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার; রাজশাহীর আবাসিক এলাকাগুলোকে অস্ত্র, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করা; রুয়েট ও এর আশপাশের এলাকাগুলোকে চুরি, ছিনতাইকারীমুক্ত করা; চুরি করা মালামাল ফেরত ও জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা এবং রুয়েটের ভেতরে বহিরাগত প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।  

নগরের চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি মামলা হয়েছে। মামলায় রাতেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের আজ মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।