অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে আপত্তিকর ভিডিও, তরুণীর মামলার পর গ্রেপ্তার ১

যৌন হয়রানিপ্রতীকী ছবি

সুনামগঞ্জে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে কলেজছাত্রীর (১৯) আপত্তিকর ভিডিও ধারণ ও বিয়ে না দিলে সেই ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশের হুমকির ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে মেয়েটি বাদী হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে সদর মডেল থানায় মামলা করলে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম সাহাব উদ্দিন (৩২)। মেয়েটির পাশের গ্রামের বাসিন্দা। তবে মেয়েটিকে উত্ত্যক্তকারী প্রধান আসামি (২৫) এখনো পলাতক। জেলার অন্য আরেকটি উপজেলায় তাঁর বাড়ি। তাঁকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

ভুক্তভোগী মেয়েটির সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। এ ঘটনায় মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্বজনেরাও চিন্তিত। কেউ কেউ বিষয়টি মীমাংসা করার পরামর্শ দিলেও ভুক্তভোগী ও তাঁর বাবা রাজি নন। তাঁরা গত রোববার থানায় গিয়ে পুলিশকে বিস্তারিত জানান। এরপর গতকাল রাতে মামলা করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটি নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। পুলিশ জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চালায়। মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ভুক্তভোগী ও তাঁর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর উপজেলার একটি গ্রামে তাঁদের বাড়ি। আর্থিকভাবে পরিবারটি অসচ্ছল। বাবা কৃষক। মেয়েটির দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে থাকেন। ছোট ভাই বাড়িতে কৃষিকাজ করেন। এসএসসি পাসের পর মেয়েটি শহরের একটি কলেজে ভর্তি হয়। এরপর শহরে চাচার বাসায় থেকে লেখাপড়া করছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী জানান, মাস দুয়েক আগে থেকে একটি ছেলে কলেজে যাওয়া-আসার পথে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করেন। বিভিন্ন সময় ফোন করেন। রাস্তায়, কলেজের সামনে ও আশপাশে ঘোরাঘুরি করতেন। কিন্তু মেয়েটি তাঁকে এড়িয়ে চলতেন। ৯ জুন মেয়েটি কলেজে ব্যবহারিক একটি ক্লাসে যান। সেদিন কলেজে শিক্ষার্থী কম ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্লাস সেরে বাসায় যাওয়ার জন্য কলেজের ফটকের সামনে অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মিনিট দুয়েক পর একটি অটোরিকশা এগিয়ে আসে। সেটির সামনে চালকের বাঁ পাশে আরেকজন যাত্রী ছিলেন। মেয়েটি পেছনের খালি আসনে একা বসেন। অটোরিকশাটি একটু সামনে গিয়েই আবার থামে। তখন চট করে তাঁর দুই পাশে আরও দুজন লোক ওঠেন। ডান দিকে তাঁকে উত্ত্যক্তকারী যুবককে দেখেই তিনি অটোরিকশা থামাতে বলেন এবং নামার চেষ্টা করেন। তখনই চালক দ্রুত অটোরিকশা চালান এবং সঙ্গে সঙ্গে দুই পাশে থাকা দুজন তাঁর নাকেমুখে কী একটা ছিটিয়ে দেন। এরপর তিনি আর কিছু বুঝতে পারেননি।

মেয়েটি বলেন, একপর্যায়ে তাঁর চেতনা ফিরলে তিনি বুঝতে পারেন, অটোরিকশায় আছেন। কয়েক মিনিট পরই আবার কলেজের ফটকে এসে অটোরিকশা থামে। তাঁকে নামিয়ে দিয়ে ওই যুবক কাউকে কোনো কিছু না বলতে সতর্ক করে দেন এবং বলেন, ‘তোর কিন্তু ভিডিও আছে, কোনো কিছু কইলে ভিডিও ফেসবুকে ছাইড়া দিলাইমু।’ এরপর তিনি একটি ইজিবাইকে বাসায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুধু ঘুম পাচ্ছিল তাঁর। কোনো কিছুই মনে করতে পারছিলেন না। দুই দিন শুধু ঘুমিয়েছেন। বিষয়টি তাঁর বাবাকে জানালে ১২ জুন তিনি এসে মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে গিয়ে বাবাকে ঘটনা বিস্তারিত খুলে বলেন। পরে পাশের গ্রামের দুই ব্যক্তি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই যুবকের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। দুই ব্যক্তির একজন ঈদের দিন ১৭ জুন বিকেলে আসেন। তিনি এসে মেয়েটিকে জানান, ওই যুবক (উত্ত্যক্তকারী) বলেছেন, বিয়েতে রাজি হলে তাঁর কাছে থাকা ভিডিও ও ছবি মুছে ফেলবেন।

মেয়েটি আরও বলেন, উত্ত্যক্তকারী যুবক ছাড়া অন্য কাউকে তিনি চেনেন না। তাঁকে তুলে নেওয়া ও আবার কলেজের ফটকে নামিয়ে দেওয়ার মাঝখানে তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছে, তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি।

মেয়েটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই ছেলের বাড়ি শহরে নয়, জেলার অন্য একটি উপজেলায়। ছেলেটি বখাটে। কোনো লেখাপড়া নেই। তিনি বলেন, পুলিশকে জানানোর পর থেকে তারা সহযোগিতা করছে। মেয়েসহ তাঁদের পরিবারকে সাহস দিচ্ছে।