কুমিল্লায় যুবদলের এক পক্ষের ওপর আরেক পক্ষের গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কুমিল্লায় যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্রবাজি ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় অন্তত চারজন আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে নগরের কান্দিরপাড় লাকসাম সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আতঙ্কে পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শর্টগানের কার্তুজ ও বিস্ফোরিত ককটেলের খোসা উদ্ধার করে।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উত্বাতুল বারী ওরফে আবু ও সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লার (টিপু) অনুসারী যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। আহত ব্যক্তিরা হলেন যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মী নগরের শ্রী বল্লভপুর এলাকার ফখরুল ইসলাম (২৯), ঠাকুরপাড়া এলাকার অন্তর দেবনাথ (২৪), নগরের দ্বিতীয় কান্দিরপাড় এলাকার জাকির হোসেন (২৪), ২৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সদস্য স্বপন দাস (৩৪)।
এ ঘটনায় আজ সোমবার মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উত্বাতুল বারীর অনুসারী মো. কবির হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন (৩৮), মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছোটন (৪০), দক্ষিণ জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ওরফে ভাগিনা রনি (৪২), যুবদল কর্মী রেজোয়ান (৩৭), নয়ন (৩৫), সাগর (৩৫) আজাদ (৩৬), মুরাদসহ (৩২) অজ্ঞাতনামা ১৫-১৬ জন। তাঁরা সবাই মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লার অনুসারী। পুলিশ এখন পর্যন্ত এ মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সংঘর্ষের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি।
এর আগে ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর দুপুরে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে যুবদলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি হয়। তখন কালো রোবকা পরে যুবদলের নেতা-কর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে গুলিবর্ষণ করেন।
দলীয় ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত রমজানে কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগরপাড়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমিন উর রশিদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয়ে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিনের ওপর হামলা চালান মহানগর যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ উদ্দিন। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় যুবদল তদন্ত করে রিয়াজকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়। গত রোববার (২ জুন) রিয়াজের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হয়। এরপর রোববার বিকেলে আনন্দমিছিল করেন রিয়াজের অনুসারীরা।
এরপর রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে ফরিদ উদ্দিনের নেতৃত্বে যুবদলের একদল কর্মী আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল, লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে লাকসাম সড়কের জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকানের সামনে হঠাৎ হামলা চালান। এ সময় ১০ থেকে ১২টি গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। কয়েকটি ককটেলও বিস্ফোরিত হয়। একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। হামলায় ও গুলিবর্ষণে যুবদল ও ছাত্রদলের চার কর্মী আহত হন। তাঁদের নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত ব্যক্তিরা সবাই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উত্বাতুল বারীর অনুসারী।
উত্বাতুল বারী বলেন, রিয়াজের অব্যাহতি প্রত্যাহারের পর আনন্দমিছিল হয়। রাতে সবাই জাহাঙ্গীরের চায়ের দোকানে বসে ছিল। হঠাৎ শটগান, ককটেল, হকিস্টিক নিয়ে এসে সন্ত্রাসী হামলা হয়।
এদিকে সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছোটনের হাতে শর্টগান। মুখে মাস্ক লাগিয়ে হামলা করছেন কয়েকজন। নয়নের হাতে ককটেল, আজাদ অস্ত্র হাতে, বাবু নামের একজনকে ককটেল হাতে দেখা গেছে। আরেক ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা গেঞ্জি পরা সাইফুল ইসলাম রনি ও ফুল শার্ট পরা আজাদ একসঙ্গে হামলায় অংশ নিচ্ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় উত্বাতুল বারী মহানগর যুবদলের সভাপতি ও ইউসুফ মোল্লা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উত্বাতুল ও ইউসুফের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছে। ওই বিরোধ ছড়িয়ে আছে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলেও।
হামলার বিষয়ে দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমি তো হামলায় ছিলাম না।’
মহানগর যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ওপর আকস্মিক হামলা হয়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, ‘ফরিদ উদ্দিনকে রোজায় জখম করা হয়। তাঁর শরীরের জখম এখনো সারেনি। এরই মধ্যে ওরা আনন্দ উল্লাস করে। তখন ছেলেদের (যুবদলের) সঙ্গে ঝামেলা হয়। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, তাঁরা যুবদলের নেতা–কর্মী।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। যুবদলের দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।