কাজ শুরুর তিন বছরেও অগ্রগতি নেই, ভোগান্তি

নীলফামারীর ডোমার-বসুনিয়ার হাট সড়ক সংস্কারকাজ শেষ না হওয়ায় ভুগতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। সম্প্রতি তোলা ছবিছবি: প্রথম আলো

নীলফামারীর ডোমার-বসুনিয়ার হাট প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু হয় তিন বছর আগে। এ জন্য বরাদ্দ ধরা হয় প্রায় ৯ কোটি টাকা। কিন্তু সড়কটির সংস্কারকাজ শুরু করে এখনো সম্পন্ন না করে ফেলে রাখায় ভোগান্তি বেড়েছে ওই পথের চলাচলকারীদের মধ্যে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বসুনিয়ার হাট ব্যবসায় প্রসিদ্ধ এলাকা হওয়ায় প্রতিদিনই ওই পথে ভারী যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে পরিবহন খরচ বেশি দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কাজ শুরুর আগে সড়কটি চলাচলের জন্য মোটামুটি উপযোগী থাকলেও বর্তমানে একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভালো সড়ক ভেঙে বিছানো হয়েছে ইটের খোয়া ও বালু। আবার কোথাও রয়েছে ভাঙা অবস্থায়। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। এখন ভ্যান–রিকশাও চলছে ঝুঁকি নিয়ে। প্রায় প্রতিনিয়ত ওই সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায় সড়কের বেহাল। এ সময় কথা হয় ওই সড়কের পাশের বাসিন্দা আরডিআরএস মোড়ের মো. শাহিনুর ইসলামের (৪০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কাজ হবে কত দিন, আর খুঁড়ি থুইছে কয় বছর আগত। বেহাল অবস্থা করি থুইছে রাস্তাটার। এই রাস্তাত এলা ভ্যান–রিকশাও যাবার পারে না।’ পশ্চিম চিকনমাটি গ্রামের বাসিন্দা মো. মোস্তাকিন ইসলাম বলেন, ‘তিন বছর আগত রাস্তাটা ভাঙি থুইল, তখন রাস্তাটা ভালো ছিল। এলা ঠিকাদারও নাই, কামও নাই। ভ্যান কাছত থাইকতেও চড়ির পারি না। সরকার তো রাস্তা পুলের জইন্য টাকা খরচ করেছে, হামার উন্নয়ন হয় না। এই রাস্তাটা এলা একদম চলে না। ভাঙার আগোতে ভালো ছিল।’

ডোমার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডোমার বসুনিয়ার হাট, ডোমার আমবাড়ি ভায়া আলসিয়ার মোড় ও বোড়াগাড়ি হাট ভায়া মটকপুর ডিমলা সড়ক। এই তিন সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ২৪ দশমিক ৩৬০ কিলোমিটারের একটি প্যাকেজ করা হয়। ওই প্যাকেজের প্রাক্কলন ব্যয় ২২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ধরে ২০২১ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঝিনাইদহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইউনিক কনস্ট্রাকশন সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পায়। ২০ কোটি ৯৯ লাখ ৬৮ হাজার ৩০ টাকা ব্যয়ে কাজটি করতে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠানটি।

প্যাকেজের ডোমার-বসুনিয়ার হাট সড়কটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৭০০ কিলোমিটার। এ অংশটুকুর সংস্কারকাজের চুক্তিমূল্য ধরা হয় ৮ কোটি ৯০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ২০২১ সালের ২০ জুলাই তাঁদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে। শুরুর কিছুদিন পর থেকেই কাজ বন্ধ।

এ বিষয়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ঠিকাদার মোজাহার উদ্দিনের ছেলে মো. নিজাম উদ্দিন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজটি ২০১৮ সালের দরে নেওয়া ছিল। জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় ওই কাজটি করতে গিয়ে আমরা দেউলিয়া হয়ে গেছি। দর পুনর্নির্ধারণ না করায় আমরা আগের দরে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছি। এখন কাজটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে।’

ডোমার উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিকরুল আমিন প্রথম আলোকে জানান, তিনটি সড়ক মিলে একটি প্যাকেজ করা হয়। কাজটি করতে চুক্তিবদ্ধ হয় ঝিনাইদহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইউনিক কনস্ট্রাকশন। তারা ডোমার–বসুনিয়ার হাট সড়কের ৪০ শতাংশ এবং বোড়াগাড়ি-ডিমলা সড়কের ৮৫ শতাংশ কাজ করার পর কাজ বন্ধ রাখে। ওই প্যাকেজের ডোমার থেকে আলসিয়ার মোড় সড়কটির কোনো কাজই তারা করেনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এক বছর ধরে পত্র দেওয়া হচ্ছে, তারা কোনো জবাব দিচ্ছে না। এখন কাজটির বাতিল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এটি বাতিল করার পর ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, সড়কটির কাজ শুরুর আগে কিছু অংশ ভাঙা থাকলেও বেশির ভাগ অংশ চলাচল করার মতো ছিল। অনেকটা ভালো রাস্তায় ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। পরে ওই রাস্তায় ভেঙে খোয়া ও বালু বিছানো হয়। আর ভাঙা অংশ আগের মতোই পড়ে থাকে।